September 25, 2024, 9:16 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-09-25 06:45:40 BdST

নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি বাণিজ্যব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বেবিচকের পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে


আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব বিস্তার করে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি বাণিজ্য এবং সহকর্মীদের নানাভাবে নাজেহাল করার দায়ে পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

‘বিক্ষুব্ধ’ কর্মচারীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে বেবিচক সূত্র জানিয়েছে।

অভিযুক্ত কর্মকর্তারা হলেন—নিরাপত্তা বিভাগের উপ-পরিচালক রাশিদা সুলতানা, ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের উপপরিচালক মো. ওয়াহিদুজ্জামান, ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স বিভাগের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেন, ভাণ্ডার শাখার উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান এবং বেবিচক সদর দফতরের উপপরিচালক (পিএস টু চেয়ারম্যান) সোহেল কামরুজ্জামান।

রাশিদা সুলতানাকে গত ১৫ আগস্ট পাবনার ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে বদলি করা হলেও তিনি এখনও সেখানে যোগদান করেননি। এমতাবস্থায় তার বেতন বন্ধের প্রক্রিয়া চলছে।

বেবিচক সদর দফতরের উপপরিচালক (পিএস টু চেয়ারম্যান) সোহেল কামরুজ্জামানকে ১১ আগস্ট ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনসে বদলি করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে বলে বেবিচক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেবিচকে এই পাঁচ কর্মকর্তা অবৈধ প্রভাব খাটাতেন। নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতিতে একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিল তাদের। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা কামানোর অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। রাশিদা সুলতানার দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদনও হয়েছে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন বিমানের কর্মচারীরা। গত ১৮ আগস্ট এই কর্মকর্তাদের ‘দুর্নীতিবাজ-দানব’ উল্লেখ করে তাদের তাৎক্ষণিক চাকরিচ্যুত করার দাবি জানান তারা।

জসীম নামে এক কর্মচারী বলেন, এই কর্মকর্তারা বেবিচকের নানা টেন্ডারবাজির সঙ্গেও জড়িত। তারা অনেকের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রমোশন আটকানোর কাজ করতেন। তাদের নানা কাজে মদত দিতেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মোকাম্মেল হোসেন। আমরা তার বিষয়েও ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

বেবিচকের একটি সূত্র জানায়, কর্মচারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে অভিযোগ সত্য কিনা সে ব্যাপারে কোনও তদন্ত হয়নি।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, এই কর্মকর্তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বদলি বাণিজ্য করেছেন। যাকে যেখানে খুশি বদলি করেছেন, প্রমোশন আটকে রেখেছেন, বিদেশে যেতে বাধা দিয়েছেন। তাদের কথামতো কাজ না করলেই বিএনপি-জামায়াতসহ দলীয় ট্যাগ দিয়ে অফিসিয়াল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতেন। কর্মকর্তাদের অনেকেই আবাসন সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হলেও তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, সাধারণ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে অনেক কর্মচারী তাদের নিপীড়নের শিকার। তাদের বদলি নয়, অপসারণ করতে হবে। নতুবা তারা বেবিচকে থেকে আবারও নানা ষড়যন্ত্র করতে পারে।

অপরদিকে অভিযোগের বিষয়ে উপপরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, ‘যারা আমাদের দুর্নীতিবাজ বলছে তাদের ইতিহাস কী? আমরা কোনোভাবেই কোনও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় আমাকে চট্টগ্রাম বদলি করা হয়েছিল। অথচ সেখানে আমার কোনও পদই ছিল না। এগুলো তো আমরা মেনে নিয়েছি। ওই সময় যারা নিজেদের আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থক দাবি করেছিল, এখন তারাই বিএনপি সেজে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন যদি কর্তৃপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, তবে কী আর করার আছে। আইনিভাবে সেটি মোকাবিলা করতে হবে।

অভিযুক্ত অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, ‘আমরা সার্বিক দিক বিবেচনা করে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আরও কিছু পদক্ষেপ আমরা নেবো।’

তিনি বলেন, ‘আমার যোগদানের পর অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। তারই আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা