September 28, 2024, 9:32 pm


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2024-09-26 17:46:31 BdST

ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরীর কারিগর সাবেক স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব সাইফুল হাসান বাদল


সাবেক স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব সাইফুল হাসান বাদলের বিরুদ্ধে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ (সার্টিফিকেট) তৈরীর অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে প্রকাশ, সাবেক স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব সাইফুল হাসান বাদল সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্রী ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামের সরকারি পি,এস থাকাকালীন সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং সড়ক ও জনপদ সহ বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাকরিতে পদোন্নতি এবং মেয়াদ বৃদ্ধি পেতে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরী করে দিয়ে কোটি কোটি টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেছেন। ওই সময়ে ক্যাপ্টেন তাজুলের সবচেয়ে কাছের ছিলেন সাইফুল হাসান বাদল। সে সুবাধে তৎকালীন সড়ক ও জনপদ  অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শাহাবুদ্দিন কে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পেতে  সাইফুল হাসান বাদল মুক্তিযোদ্ধার সনদ তৈরি করে দেন। বিনিময়ে প্রতিমন্ত্রী সহ তিনি শাহাবুদ্দিনের কাছ থেকে দশ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পরবর্তীতে শাহাবুদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা সনদ সহ তার নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদকে মামলাও হয়েছিলো। তিনি ওই মামলায় জেল খেটেছেন।

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলাম গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর তার সকল অনিয়ম দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতির সব স্বীকারোক্তি দিয়েছেন প্রশাসনের কাছে। এর মধ্যে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ এর বিষয়টিও অকপটে স্বীকার করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় সাবেক পি,এস সাইফুল হাসান বাদলের নাম উঠে এসেছে। সাইফুল হাসান বাদল ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। তিনি কয়েক হাজার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরীর মাস্টারমাইন্ড ছিলেন। এই ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে শত শত কোটি টাকা শুধু নিজে পকেটস্থ করেছেন। সমপরিমাণে প্রতিমন্রীকেও দিয়েছেন। এতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকা। আর লাভবান হয়েছেন বাদল-তাজুল সিন্ডিকেট।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সওজের শাহাবুদ্দিন ছাড়াও ওই সময়ে আরো তিনজন সচিবকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে সহযোগিতা করে ছিলেন বাদল। তাদের কাছ থেকেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বাদল। তিনি একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ।

রাশিদা আক্তারের নিয়োগ দেয়ার সময় পত্রিকায় কোন বিজ্ঞাপন দেয়া হয়নি। ওই পদে নিয়োগ পেতে ১৫ বছরের যে অভিজ্ঞতা লাগে তাও ছিলোনা রাশিদার। শুধু ছিলো টাকা দিয়ে তদবির করে পদ বাগিয়ে নেয়ার যোগ্যতা।

জানা যায়, সাবেক স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব সাইফুল হাসান বাদল মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের টুইব্বা গ্রামের বাসিন্দা। থাকেন রাজধানী ধানমন্ডি মোহাম্মদপুরে। তিনি  সিনিয়র সহকারী থেকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে থাকাকালীন সময়ে অনেক অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়েন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এরপর তিনি উপ-সচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হয়ে বিভাগীয় কমিশন পদোন্নতি নিয়ে বরিশালে নিয়োগ পান। অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব হিসেবে যোগদান করেন। সম্প্রতি তিনি অবসরে গিয়েছেন।

গোয়েন্দা সূত্রমতে, ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলাম সব সিদ্ধান্ত নিতেন সাইফুল হাসান বাদলের কথায়। তিনি যেভাবে বলতেন, ক্যাপ্টেন তাজুল তাই করতেন। তার আমলে বিভিন্ন সেক্টরের প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীদের চাকরির মেয়াদ বাড়াতে এবং পদোন্নতি পেতে মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ হলে খুব সহজে ই সম্ভব হতো। আর এ সুযোগটি বেশি কাজে লাগিয়েছেন সাইফুল হাসান। এই পর্যন্তই শেষ নয়, তিনি যাদেরকে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়েছেন তাদের নিকট থেকে ঠিকাদারি তদবির সহ বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্য করেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাদল মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা হবার সুবাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের অনেক সুযোগ-সুবিধাও ভোগ করেছেন বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

সাবেক স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব সাইফুল হাসান বাদলের বক্তব্য এবং মন্তব্য জানতে একাধিক বার তার মুঠো ফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপ-এ মেসেজ দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। যা হুবুহু তুলে ধরা হলো- জনাব আসসালামু আলাইকুম। আশা করি ভালো আছেন। আমি শাহীন আবদুল বারী। নির্বাহী সম্পাদক, দ্য ফিনান্স টুডে। আপনাকে একাধিক বার ফোন করেছি। হয়তো ব্যস্ততার কারণে ধরতে পারেননি। আমার কিছু জানার ছিলো আপনার কাছ থেকে। তা হলোঃ আপনি বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালনকালে অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে কিছু সেক্টরে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ এর বিষয়ে আপনি সহযোগিতা করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপদ সহ বিভিন্ন দপ্তরের প্রদান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলীদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে তাদের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকার ঘুষ নিয়েছেন। সরি, ভুল ক্ষমা করবেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা