September 27, 2024, 5:18 am


শাফিন আহমেদ

Published:
2024-09-26 20:51:43 BdST

কেরানীগঞ্জ মোল্লার হাটে অবৈধ ইটভাটা


শীত মৌসুম আসলেই ইটভাটা ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে উঠেন, অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠেছে ইটভাটা। ইতোমধ্যে দেশে ইট পোড়ানো মৌসুম শুরু হতে চলছে। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, লোকালয় ও বনাঞ্চলের আশপাশে, পাহাড়ের পাদদেশে এবং দুই বা তিন ফসলি কৃষি জমিতে ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। ফলে পরিবেশগত বিপর্যয়সহ জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা মানছেন না কোনো নিয়মনীতি। তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে অবাধে ইটভাটা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে প্রতিটি ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা। পতিত সরকার আমলে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় রাজনীতিবিদরা এই সেক্টরকে সিন্ডিকেট তৈরী করে ইটের দাম বৃদ্ধি করছে।

দেশের প্রায় ৮ হাজার ইটভাটার মধ্যে বেশির ভাগই পরিবেশ ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নেই। ইট খোলায় মাটি ও নিম্ন মানের কয়লা পোড়ানোর ফলে বায়ুমন্ডলে প্রচুর পরিমান কার্বন-ডাইঅক্সাইড ও কার্বন মনোঅক্সাইড সহ যোগ হচ্ছে ক্ষতিকর বিভিন্ন পার্টিকুলেটস ম্যাটার যা মানব দেহে শ্বাসযন্ত্র ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ঘোষনা দিয়েছেন যেসব ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই এবং যত্রতত্র ইটভাতা গড়ে তুলেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেরানীগঞ্জের মোল্লার হাট- বক্তারচর গ্রাম। গ্রামের চারদিকে তাকালে ইটভাটা সাড়ি সাড়ি, যেনো এক ব্রিক সিটি। চোখে পড়ে ‘মেসার্স মফিজউদ্দিন এন্ড সন্স’ নামের একটি ইটভাটা। ভাটায় একটি চিমনি, জিগজ্যাগ নিয়মে নিয়ন্ত্রিত। রহস্যঘেরা এই ভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মাটি কেটে ও গাছ পুড়ে ভাটা চালানো হচ্ছে বিনা অনুমোদনে আইনের তোয়াক্কা না করেই কার্যক্রম চলছে। শুধু তাই নয়, শহীদ জিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই এই ভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, ‘বিশেষ কোন স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বা অনুরূপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে কমপক্ষে ১ (এক) কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে থাকতে হবে’। এমন আইন বিদ্যমান রয়েছে।

সূত্র মতে জানা যায়, অবৈধ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গড়ে তুলে তুলেছে এসব ইটভাটা। পরিবেশ ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসক, বিএসটিআই মান নির্ধারন ছাড়াই স্থানীয় এক শ্রেনির প্রভাবশালী মহল প্রতি বছর ইটভাটা মালিক পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন করেন মালিক সমিতি। এ টাকা দিয়েই সব দপ্তরকে ম্যানেজ করতে হয়। শীত মৌসুমের সময় উৎপাদন সময়কালে এই ভাটায় দেদারসে পুড়ানো হয় কাঠ ও টায়ার। ফলে মারাত্মকভাবে দূষিত হয় বায়ুমন্ডল। এক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর বিধিবিধানের কোনো বালাই নেই। মেসার্স মফিজউদ্দিন এন্ড সন্স এর মালিক শাখাওয়াত হোসেন। তিনি আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের খুব কাছাকাছি ছিলেন। তাদের প্রভাবে এলাকায় ইটভাতা ব্যবসা ছিলো রমরমা। এলাকার অনেক বাড়ির মালিক ব্যবসায়ীদের সাথে ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে ইটের চড়া দাম হাকাতেন। এখনো পতিত সরকারের সেই নেতাদের নাম বিক্রি করন তিনি। গোপনে তাদের কাছে টাকা পাঠান বলেও অভিযোগ উঠেছে। শাখাওয়াত ইটভাতা সিন্ডিকেটের অন্যতম একজন সদস্য।

প্রতিষ্ঠানের প্রোপ্রাইটর শাখাওয়াত হোসেন জানায়, ‘পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের সার্টিফিকেট রিনিউ করা হয়নি’। পরবর্তীতে তাকে একাধিকবার কল করা হলে পাওয়া যায়নি। তার অধিনস্থ আসাদুল্লাহর সাথে ফোনে কথা হলে তিনি হুমকি ও দাম্ভিকতার সাথে বলেন, 'নিউজ করে দেন'।

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকা জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক মোঃ ইলিয়াস মাহমুদ জানায়, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ (এক) কিলোমিটার দূরত্বে ভাটা স্থাপন করলে পরিবেশ ছাড়পত্র দেওয়া হবে না’।

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) সি এম শাখার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানায়, ‘পরিবেশ ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ব্যতীত বিএসটিআই কর্তৃক মান নির্ধারনের ছাড়পত্র দেওয়া হয় না। শুধু তাই নয়, বিএসটিআই অনুমোদন ছাড়া বাজারে পন্য বিক্রি অবৈধ’।

সচেতন মহল বলছে, প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কোনো অভিযানও চোখে পড়ে না। ক্ষমতাশীল ও প্রভাবশালীদের ক্ষমতার দাপট ছাড়াও বিশেল ব্যবস্থায় এসব ইটভাটা চলছে বলে মন্তব্য করছেন তারা। অবৈধ ইটভাটার রসদ ও মালামাল আনা নেয়া বা ইট পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক অবৈধ যানবাহন ট্রাক্টর-টলি। অবৈধ যানের কারণে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে তছনছ হওয়াসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা