May 6, 2025, 12:47 pm


নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক

Published:
2025-03-16 16:53:07 BdST

ডিপ স্টেটই কি ফ্রিম্যাসনের আধুনিক সংস্করন?


সম্প্রতি ডিপ স্টেট নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। অনেকেরই আগ্রহের জায়গা হয়ে উঠেছে এই ডিপ স্টেট। ডিপ স্টেট নিয়ে পড়তে যেয়ে হঠাৎ মনে পড়ে গেলো খ্রীস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে রাজা সলোমান কর্তৃক জেরুলামে ‘টেম্পল অব সলোমন এর ফ্রিম্যানসদের কথা।

ডিপ স্টেট এমন একটি ধারণা বা তত্ব যা বোঝাতে চায় যে, রাষ্ট্রের ভিতর অদৃশ্য অপ্রকাশিত শক্তি কাজ করে যা সরকার নির্বাচিত কর্মকর্তা কিংবা জনগণের ইচ্ছার বাইরে থেকেই ক্ষমতার পরিচালনা করে।

এটি সাধারণত সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, আমলাতন্ত্র কিংবা কর্পোরেট মাধ্যমের ব্যক্তিদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। ধারনা করা হয় ডিপ স্টেট প্রভাবশালী কর্পোরেশন, গোয়েন্দা সংস্থা ও ব্যাংকিং সেক্টরের মাধ্যমে রাষ্ট্রের নীতিকে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। গোপন নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উপর প্রভাব বিস্তার করে৷ যেন তারা ডিপ স্টেট ব্যক্তিদের ইচ্ছা মত কাজ করে৷

ফ্রিম্যাসন কী?

ফ্রিম্যাসন সম্পর্কে প্রথম ধারনা পাই মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টি গবেষক মফিদুল কাকুর কাছ থেকে। তিনি লেখক পাঠক কেন্দ্রের একটি লিটলম্যাগে আমার অনুরোধে ফ্রিম্যাসন নিয়ে দীর্ঘ একটা লিখা তৈরি করেন। যা কয়েক বছর আগে ছাঁপা হয়।

তথ্যসূত্রে যেটুকু জানা যায় খ্রীস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের দিকে রাজা সলোমান কর্তৃক জেরুলামে ‘টেম্পল অব সলোমন’ তৈরির সময় পাথর কাটার জন্য মিস্ত্রি বা ‘মোসনিক'(Masonic) নিয়োগ দেয়া হয়। বলা হয় যে ‘টেম্পল অব সলোমন’ এর নকশা রাজা সলোমান সরাসরি ঈশ্বর থেকে পেয়েছিলেন। নির্মানাধীন ‘টেম্পল অব সলোমন’-কে ঘিরে সেই সময়েই পাথর কাটার মিস্ত্রিদের একটি সংঘ ‘মোসনিকগিল্ড’ গড়ে উঠেছিল। হাইরাম আবিফ ছিলেন সেই সংঘের ‘Master Mason’ বা বর্তমান কালের ভাষায় প্রধান স্থপতি।

হাইরাম আবিফ প্রতিদিন নকশার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ তার শিষ্যদের দেখাতেন কাজ করার জন্য এবং বলতেন স্থাপত্য নির্মান শেষ হলে তাদের সবাইকে সম্পূর্ণ স্থাপত্যের নিগূঢ় জ্ঞান জানিয়ে দিবেন। কিন্তু সংঘের কতিপয় ধৈর্যহারা শিষ্য স্থাপত্যের মূল নকশার কাজ শেষ হবার পূর্বেই হাইরাম আবিফকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাকে হত্যা করার পূর্ব মুহূর্তেও বলা হয়েছিল যদি হাইরাম আবিফ তাদেরকে সম্পূর্ণ স্থাপত্য সম্পর্কে জ্ঞান দেয় তবে তারা হাইরাম আবিফকে ছেড়ে দিবে। কিন্তু আবিফ রাজার দেয়া দায়িত্ব পালনের জন্য এবং সততা রক্ষার্থে সম্পূর্ণ স্থাপত্য সম্পর্কে জ্ঞান দিতে অস্বীকার করেন এবং তার শিষ্যদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন।

দায়িত্ব ও মুক্ত চিন্তার রক্ষায় আবিফের এই আত্মত্যাগ থেকেই ফ্রিম্যাসনরির উদ্ভব। হাইরাম আবিফের মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তাধারা থেকে ‘ফ্রি’(মুক্ত) এবং স্থাপত্য শিল্পী হতে ‘Mason-ম্যাসন’ (কারিগর) শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে ‘ফ্রিম্যাসন’ শব্দের উৎপত্তি। যার শাব্দিক অর্থ ‘মুক্ত কারিগর’।

ফ্রিম্যাসনরিদের চোখে মুক্ত এবং স্বাধীন চিন্তার অধিকারী হাইরাম আবিফ একজন সর্বশ্রেষ্ঠ বীর, মহৎপ্রাণ এবং আদর্শ। হাইরাম আবিফ এর সততা ফ্রিম্যাসনারি গোষ্ঠীর আত্মবিশ্বাস এবং সততার মূলভিত্তি। ফ্রিম্যাসনরা অর্থাৎ যারা মুক্ত ও স্বাধীন চিন্তার অধিকারী তারা সর্বদা তিনটি শত্রুকে- অজ্ঞতা, গোঁড়ামি ও স্বৈরাচারকে ধ্বংস করতে চায়।

অসাম্প্রদায়িক বাংলার ঢাকা রাজধানীতে সময়ের সাথে সাথে গড়ে উঠেছে অসংখ্য স্থাপত্য। ধানমন্ডির জাহাজ বাড়ি, পুরান ঢাকার হোসেনী দালান, ছোট কাটরা, বড় কাটরা, আহসান মঞ্জিল ও লালবাগ কেল্লার মত অনেক প্রাচীন স্থাপনাই এখনো ঠায় দাড়িয়ে আছে এই ঢাকার বুকে। তবে এই স্থাপনাগুলোর বেশিরভাগই আজ অতীতের সৌন্দর্য হারিয়ে জীর্ণপ্রায়। এমনই এক হারানো স্থাপত্য হচ্ছে পুরানো পল্টনের ইহুদিক্লাব নামে পরিচিত ‘ফ্রিম্যাসন হল’।

জিরো পয়েন্টের কাছে পল্টন মোড়। সেখানে ঢাকা মাইক্রোবাস ও কার মালিক সমিতির আড়ালে মুক্তাঙ্গন। তার পাশেই রয়েছে একশ দশ বছরের পুরোনো দো’তলা এই ভবনটি। ভবনটি কারুকাজে খচিত বর্তমানের আধুনিক ভবন কিংবা বুড়িগঙ্গার তীরের আহসান মঞ্জিলের ন্যায় সৌন্দের্যের মূর্ত প্রতীক নয়। আবার লালবাগ কেল্লার মত তুমুল জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানও হয়তো নয়। তবে ঢাকা শহরের অন্যতম একটি প্রাচীন স্থাপত্য এই ফ্রিম্যাসন হল।

‘ঢাকায় অবস্থিত ফ্রিম্যাসন-১৯১০’ ফলকের প্লেটই বলে দেয় রজতজয়ন্তি, সুবর্নজয়ন্তি ও শতবর্ষ পেরিয়ে আজ এর বয়স প্রায় একশত পনের । তবে অত্যন্ত সাদামাটা এই ভবনের গায়ে ‘ফ্রিম্যাসন-১৯১০’লেখাটিই কৌতুহল সৃষ্টি করে। লোকসমাজে এটা ইহুদিদের ক্লাব, ইহুদিরা গোপন সভাকেন্দ্র কিংবা ইহুদিদের প্রার্থনার জায়গা হিসেবে বেশি পরিচিত ছিল। কিন্তু আশ্চার্যজনক হলেও সত্য যে, ফ্রিম্যাসন শব্দের সঙ্গে ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক অনুপস্থিত।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.