শাহীন আবদুল বারী
Published:2025-04-17 18:38:04 BdST
ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের পদোন্নতিব্যাংকিং খাতে দক্ষ কর্মকর্তারা বঞ্চিত
ব্যাংকিং খাতে দক্ষ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের মহাব্যবস্থাপক থেকে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পদে দেয়া হয়েছে পদোন্নতি।
ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর এবং ব্যাংকিং খাতের ঋণ কেলেঙ্কারির যারা মূল হোতা তাদেরকে এই পদোন্নতি দিয়ে সরকার কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন বিজ্ঞ মহল।
কোন প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়া দুর্নীতিবাজদের পদোন্নতি দেয়ায় ব্যাংকিং খাতে কাজের স্থবিরতা ও হতাশা বিরাজ করছে। অপর দিকে আওয়ামী দোসরদের মাঝে আস্ফালন দেখা দিয়েছে। আর বিগত ১৬ বছর যারা সুবিধাবঞ্চিত ছিলেন তারা বঞ্চিতই রয়ে গেছেন।
বিভিন্ন সূত্র ও তথ্যমতে, সম্প্রতি দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রদত্ত পদোন্নতিতে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নিম্নবর্ণিত মহাব্যবস্থাগণকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদে গত ১০ই এপ্রিল পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে যুগ্ম সচিব ফরিদা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত এই আদেশনামা প্রেরণ করা হয়।
মহাব্যবস্থাপক থেকে উপব্যবস্থাপনা (ডিএমডি) পদে পদোন্নতি প্রাপ্তরা হলেন, মোঃ রেজাউল করিম (সোনালী ব্যাংক পিএলসি), মোঃ রফিকুল ইসলাম (বেসিক ব্যাংক লিমিটেড), রুবানা পারভীন, (অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি), নূরুল হুদা (ইনভেস্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ), মোঃ নজরুল ইসলাম ( জনতা ব্যাংক পিএলসি), মোহাঃ খালেদুজ্জামান (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক), মোঃ আশরাফুল আলম (জনতা ব্যাংক পিএলসি), মোঃ নূরুন নবী (সোনালী ব্যাংক (পিএলসি) ও মোহাম্মদ শাহজাহান (সোনালী ব্যাংক পিএলসি)।
এদের মধ্যে মোহাম্মদ শাহজাহান বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতির মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত। বিগত ১৬ বছর তিনি ছিলেন দুর্নীতির কারিগর। তার কারণে অসংখ্য ব্যাংকার পদোন্নতি ও নানাবিধ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ রেজাউল করিম, মোঃ আশরাফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শাহজাহানকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া আর যাদেরকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তাদের অধিকাংশই ছিলেন পতিত সরকারের দোসর বা গোলাম।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মোহাম্মদ খালেদুজ্জামানকে পদোন্নতি দেয়ায় ব্যাংকটিতে কাজের স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিভিন্ন টেবিলে কানাঘুষা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কোন প্রকাশ যাচাই-বাছাই ছাড়া তাকে পদোন্নতি দেয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। খালেদুজ্জামান দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তি। একই অভিযোগ উঠেছে জনতা ব্যাংকের আশরাফুল আলমকে নিয়েও। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ জনতা ব্যাংক ইউনিটির সভাপতি ছিলেন।
জানা যায়, জনতা, সোনালী, কৃষি, অগ্রণী, রুপালি, পূবালী, বেসিক, ডিবিবিএল, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ও আইসিবি ব্যাংকের যোগ্য, দক্ষ, সৎ নিষ্ঠাবান এবং অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা বিগত ১৬ বছর পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তাদের বাদ দিয়ে দেশের আর্থিক খাতের কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে আওয়ামী দোসররা। তারা এখনো বীরদর্পে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দেয়া হচ্ছে পদোন্নতি ও নানাবিধ সুবিধা। এই কারণে ব্যাংকিং সেক্টরে হতাশা ও স্থবিরতা নেমে এসেছে বলে ভুক্তভোগী মহল জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, অধিকাংশ পদোন্নতির ক্ষেত্রে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হচ্ছেনা। দেখা হচ্ছেনা তাদের অতিত খতিয়ান। অনেক ক্ষেত্রে সিনিয়রদের টপকিয়ে জুনিয়ররা পদোন্নতি পেয়েছেন। আবার যারা, আওয়ামী সরকার আমলে শত শত কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন তাদেরকেও পদোন্নতি পেতে কোন প্রকার বেগ পেতে হচ্ছেনা।
দুর্নীতিবাজদের শাস্তির বদলে পদোন্নতি
উপমহাব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান। তিনি সোনালী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে বড় অঙ্কের আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপরও তাঁকে কোনো শাস্তি পেতে হয়নি। পরবর্তীতে তাকে শাস্তির বদলে দেয়া পদোন্নতি।
মো. শাহজাহান সহ (২০২০ ও ২০২১) সালে অন্তত ৫৬ কর্মকর্তা অনিয়মে জড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। কেউ কেউ পদোন্নতিও পেয়েছেন। তারা পতিত সরকারের আমলে একেকজন ছিলেন ব্যাংক সম্রাট।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি দল অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার সুপারিশও করে ছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল, সোনালী ব্যাংকে করপোরেট সুশাসন ব্যবস্থা উদ্বেগজনকভাবে ভেঙে পড়েছে। কর্মকর্তাদের মধ্যে ন্যূনতম জবাবদিহিতা না থাকায় ব্যাংকটির ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। গুরুতর অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ব্যাংকটির অভ্যন্তরীণ সুশাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
সোনালী ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনের ওপর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখাসহ বিভিন্ন শাখায় সংঘটিত অনিয়ম, জাল-জালিয়াতি এবং দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন না মেনে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে গুরুতর অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালের জুন মাসে সোনালী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখার গ্রাহক রূপসী নিটওয়্যারের রপ্তানি এলসি ১১৬ কোটি টাকার বিপরীতে ১৭৩ কোটি টাকা ফান্ডেড ঋণ সুবিধা দেয়া হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের এপ্রিলে সাড়ে ৭ কোটি টাকার এলসি মূল্যের বিপরীতে ১১ কোটি ১৫ লাখ টাকার ফান্ডেড ঋণ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ দুই ক্ষেত্রে এলসি মূল্যের যথাক্রমে ১৪৯ এবং ১৪৮ শতাংশ ফান্ডেড ঋণ সুবিধা দিয়ে গ্রাহক যোগসাজশে সরাসরি ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এলসি দুটির বিপরীতে রপ্তানি আয় এলেও গ্রাহকের দায় সমন্বয় না করেই বিধিবহির্ভূতভাবে গ্রাহকের চলতি হিসাবে জমা করা হয়েছে। যা সরাসরি ব্যাংকের অর্থ লোপাট করার শামিল।
এছাড়া ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে রূপসী ফেব্রিক্স কমপ্লেক্সকে রপ্তানি এলসি মূল্য ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার বিপরীতে ৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ফান্ডেড ঋণ সুবিধা দিয়ে শাখা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে গ্রাহককে ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করার সুযোগ করে দেয়।
এসব অনিয়মের সঙ্গে শাখা ব্যবস্থাপক মো. শাহজাহান, এজিএম মো. সোহরাব, এসপিও আব্দুল আল মরাদ, এসপিও আব্দুল আলীম এবং পিও কামরুল হাসানের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার পরও শাখা ব্যবস্থাপক মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি পরবর্তী সময়ে তাঁকে মহাব্যবস্থাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
একই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এজিএম মো. সোহরাব হোসেনকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু ব্যাংকটির তখনকার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান প্রধান অনিয়মের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া সত্ত্বেও সোনালী ব্যাংকের কর্মচারী চাকরি প্রবিধানমালা লঙ্ঘন করে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সোহরাবের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করে চাকরিতে পুনর্বহাল করেন।
ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত গাইডলাইন্স অন ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স ইন ব্যাংকস এবং সোনালী ব্যাংকের ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স নীতির নির্দেশনা অমান্য করে অডিট কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাবেক এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধান ২০২০ সালে ৩৩ কর্মকর্তা এবং ২০২১ সালে ২৩ কর্মকর্তাকে অনৈতিক সুবিধা দেন।
এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে অনেক ক্ষেত্রে পদোন্নতি দেয়া হয়।
তৎকালীন কুমিল্লার শ্রীকাইল শাখার অফিসার আব্দুল মজিদ এবং জামালপুরের হাজরাবাড়ী শাখার সিনিয়র অফিসার মো. কাউছার আলমের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও ন্যূনতম প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
দুর্নীতিবাজ এসব ব্যাংকাররা এখনো বিভিন্ন শাখায় বহাল তবিয়তে আছেন। নারায়ণগঞ্জ শাখার অনিয়মের ঘটনায় একজনকে সাময়িক বরখস্ত করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন আতাউর রহমান প্রধান। এর আগে তিনি রূপালী ব্যাংকেরও এমডি ছিলেন।
সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত এবং তা প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের মতো আরও অনিয়ম বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে উঠে এসেছে। নমুনা হিসেবে জয়পুরহাট শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মো. জাহিদুল হাসানের নাম উল্লেখ করা হয়। তিনি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনোরূপ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়।
দুর্নীতি ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে দুদকের মুখোমুখি কৃষি ব্যাংকের জিএম খালেদুজ্জামান
দুর্নীতি ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মুখোমুখি হয়ে ছিলেন সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত কৃষি ব্যাংকের মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান। এক সময় কৃষি ব্যাংকের বিভাগীয় অফিসের জেনারেল ম্যানেজার পদে দায়িত্ব পালন করে গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব সিন্ডিকেট। তার আওতাধীন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জসহ কৃষি ব্যাংকের অন্যান্য শাখাগুলোতেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা ঋণ দিয়ে ছিলেন।
মূলত সর্বশেষ টাঙ্গাইলের মির্জাপুর শাখা থেকে মহেরা গ্রুপের নামধারী প্রতিষ্ঠানকে ধাপে ধাপে প্রায় তিন কোটি টাকার বিশেষ কৃষি ঋণ দিয়ে দুদকের মুখোমুখি হোন খালেদুজ্জামান।
এছাড়া খালেদুজ্জামান সিন্ডিকেটের ১০০ কোটি টাকার বড় অংকের ঋণ দেয়ার প্রচেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার উত্তরা ও মিরপুরসহ অবৈধ উপায়ে অর্জিত ৬/৭টি ফ্লাট-বাড়ি থাকার অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান শুরু করার পর নিয়োগ দেয়া হয় অনুসন্ধান কর্মকর্তা। অনুসন্ধান কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক প্রবীর দাস খালেদুজ্জামকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সংশ্লষ্ট নথিপত্র যোগাড় করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কৃষি ব্যাংকের ঢাকা বিভাগের জিএম মো. খালেদুজ্জামানের দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতায় ব্যাংকটির ঢাকা বিভাগ ডুবে যাচ্ছে। তিনি একজন আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ। ব্যাংকটির শাখাগুলোতে সিন্ডিকেট চক্র নিয়ন্ত্রণ করে কোটি কোটি টাকা সম্পদ গড়েন খালেদুজ্জামান।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ব্যবসায়ী তাহেরুল ইসলাম ও তার ভাই মোশারফ হোসেনের মালিকানাধীন মহেরা অয়েল মিল নামে নামধারী প্রতিষ্ঠানটি চিহ্নিত ঋণ খেলাপি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে চিহ্নিত হয়েছে ঋণ খেলাপির বিষয়টি।
ইতোমধ্যে ব্যাংকটি একই প্রতিষ্ঠানের অপর একটি প্রতিষ্ঠান মহেড়া পেপার মিলসকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ দিয়ে বিপদে রয়েছে। ওই ঋণের বিপরীতে দেয়া মর্টগেজ সম্পত্তির নথিপত্র অধিকাংশই জাল। অন্যের জমি নিজেদের দেখিয়ে ঋণ নিয়েছে।
শুধু তাই নয় সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে মহেড়া পেপার মিলসের নেওয়া ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ হিসেবে দেয়া কোর্ট বহুরিয়া মৌজার ৪৯ শতাংশ জমি দিয়ে কৃষি ব্যাংকের টাঙ্গাইল শাখা থেকে বড় অংকের ঋণ নেয়া চেষ্টা করে। কৃষি ব্যাংকের হেড অফিসের হস্তক্ষেপ ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের তদন্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ওই আটকানো গেলেও কৃষি ব্যাংকের ঢাকা অফিসের জিএম মো. খালেদুজ্জামানকে আটকানো যায়নি।
তিনি তার নিজস্ব ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষের বিনিময়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ব্যবসায়ী তাহেরুল ইসলাম ও তার ভাই মোশারফ হোসেনকে ৫০ লাখ টাকা করে ৫ কিস্তিতে জাল মর্টগেজের বিপরীতে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা কৃষি ঋণ দিয়ে ছিল।
কৃষি ব্যাংকের একটি সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মহেরা গ্রুপের মালিক তাহেরুল ইসলাম ও মোশারফ হোসেনের মালিকানাধীন কাগুজে প্রতিষ্ঠান মেসার্স নুরজাহান এগ্রো ফার্মের নামে ফর্মের নামে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৭ শতাংশ সুদে ৫০ লাখ টাকা করে কয়েক দফায় কোটি কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। গরু মোটা-তাজাকরণ ও দুগ্ধ উৎপাদন ব্যবসা খাতে ওই ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে।
মেসার্স নুরজাহান এগ্রো ফার্ম" নামক প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপারিশ করে শাখা ব্যবস্থাপককে চাপ দিয়ে ওই ঋণ মঞ্জুর করতে বাধ্য করেন জিএম খালেদুজ্জামান সিন্ডিকেট।
ওই সময়ে কৃষি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে জিএম হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি ডিএমডি পদমর্যাদার গাড়িসহ অন্যান্য সুবিধা ব্যবহার করেন বলে জানা যায়।
এছাড়াও খালেদুজ্জামান সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ছিলেন সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর। তাদের দাপটে কেই মুখ খুলতে সাহস পাননি। এবারও সেই দাপটেই পদোন্নতি পেয়েছেন মোহাম্মদ খালেদুজ্জামান।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.