April 30, 2025, 5:25 am


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2025-04-29 17:36:30 BdST

অভিযোগ কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনেররাজস্ব নীতিতে অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়ন


রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কারে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। এমন অভিযোগ তুলেছে বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন।

প্রস্তাবিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ায় অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের উপেক্ষা এবং বিশেষায়িত জ্ঞানের অবমূল্যায়নের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে এক প্রেস বিবৃতিতে এই বিষয়টি জানানো হয়।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট কাজী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রাজস্ব সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত দক্ষতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, সেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। ফলে একদিকে যেমন কর জিডিপি অনুপাত উন্নয়নের স্বপ্নে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে রাজস্ব প্রশাসনের টেকসই উন্নয়নের পথও হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।

এই বিষয়ে বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল একে এম নুরুল হুদা আজাদ জানান, রাজস্ব প্রশাসন সংস্কার এবং কর-জিডিপি অনুপাত উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত এক আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর চূড়ান্ত খসড়া নিয়েও আলোচনা করা হয়। এসময় কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ এবং দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে অবদানের কথা স্মরণ করা হয়।

অ্যাসোসিয়েশনের প্রেস বিবৃতিতে ও সভায় বক্তারা জানান, কর-জিডিপি অনুপাত উন্নয়নে অতিমূল্যায়িত জিডিপি, রাজস্ব প্রশাসনের শীর্ষপদে বাস্তব অভিজ্ঞতার ঘাটতি এবং রাজস্ব আহরণে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তারা সরকারের কাছে রাজস্ব আহরণে অধিক বিনিয়োগ এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোযোগ দেয়ার দাবি জানান।

এসব বিষয়ে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন মনে করেন, রাজস্ব সংস্কার শুধু নীতি ও বাস্তবায়ন পৃথক করলেই যথেষ্ট নয় বরং রাজস্ব প্রশাসনের সামগ্রিক শক্তিশালীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন অপরিহার্য।

সভায় বক্তরা জানান, সরকার গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির আহ্বানে বিসিএস কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে মতামত পেশ করেছে।

তবে সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত অধ্যাদেশের খসড়া পর্যালোচনা করে অ্যাসোসিয়েশন দুটি লক্ষ্য করেছে যে, তাদের প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। সভায় বিসিএস কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে রাজস্ব নীতি বিভাগের শীর্ষপদে কর-রাজস্ব আহরণে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদায়নের প্রস্তাব থাকলেও খসড়ায় ‘যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা’ নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।

রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদে বিশেষায়িত ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্টভাবে নিয়োগের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। কর আইন প্রয়োগ ও আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণের ক্ষমতা নীতি বিভাগকে দেয়ার প্রস্তাবকে সাংঘর্ষিক হিসেবে অভিহিত করা হয়।

রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব নিয়োগে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কর-রাজস্ব কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার না দেয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রশাসনিক পদসমূহে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

বক্তারা আরও বলেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণে মাঠপর্যায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অপরিসীম। অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বাদ দেয়া হলে প্রশাসনিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ব্যাহত হবে। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।

বিসিএস কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, কর-রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিশেষায়িত ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে প্রস্তাবিত বিভাগ দুটিকে ব্যবসা-বান্ধব গতিশীল ও জনমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে হবে। কোনো বিশেষ মহলের প্ররোচনায় জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে সভায় সতর্ক করে দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছিল রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগে রাজস্ব প্রশাসনে সরাসরি কাজ করা অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচন করা উচিত।

তাদের প্রস্তাব ছিল ‘রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের’ মধ্য থেকে সচিব নিয়োগ করা হবে।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খসড়ার অনুচ্ছেদ ৪(৩)-এ বলা হয়েছে ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এতে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা অগ্রাহ্য করা হয়েছে বলে মনে করছে সংগঠন দুটি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.