নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক
Published:2025-05-21 23:19:00 BdST
বৃষ্টিজল সংরক্ষণ
বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাজবাড়ীতে পানি সংকটের কিছু খবর প্রচার হচ্ছে। শুধু কি রাজবাড়ীতেই এই সমস্যা? না। সারা পৃথিবীতেই পানির স্তর ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। রাজবাড়ীতে কেবল তার প্রভাব পড়ছে।
অতিরিক্ত গভীর নলকুপের ব্যবহার, অপরিতল্পিত নগর উন্নয়ন, অধিক জনসংখ্যার কারনে আমাদের পানির চাহিদা বাড়ছে। খেয়াল করে দেখুন আমাদের দেশে অনেক এলাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মাঠে ঘাটে পানি জমে থাকে।
অন্যদিকে কোন সময়ে বা একই সময়ে, অনেক অঞ্চলে তীব্র খরাজনিত কারণে আমাদের পানির প্রতিটি ফোঁটার জন্য সংগ্রাম করতে হয়। চাষবাস ব্যাহত হয়।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা পানির ঘাটতির সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য একটি ভাল বিকল্প। এখন প্রশ্ন জাগে যে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ কি এবং এর উপকারিতা কি?
বৃষ্টির জল একটি প্রাকৃতিক উপহার। ছাদের জল সংরক্ষণ, কুয়া, পুকুর, জলাধার তৈরি করে এই জলকে সংরক্ষণ করা যায়। এতে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বৃদ্ধি পায় এবং খরার সময় এই জল কাজে লাগে। বৃষ্টিজল ভূগর্ভকে অনেক সময় রির্চাজ করে। অথচ আমাদের খামখেয়ালিপনা বা নিবুদ্ধিতার কারনে আমরা এই জলকে কাজে লাগাতে পারছি না।
কয়েকদিন আগে রাজবাড়ী পৌর এলাকায় কয়টি জলাশয় আছে সেই তথ্য আনতে গিয়েছিলাম। তাদের তথ্যমতে, শহরের মধ্যে দুটি জলাশয়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। অথচ এক সময় আমার বয়সি যারা বা যারা ৫০ বছরের বেশী বয়স তারা দেখেছেন শহরের মধ্যেই কত জলাশয়, পুকুর, খাল ছিলো। প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই একটা পুকুর ছিলো। তখন তো শিক্ষার হার এতো বেশী ছিল না, সচেতনতার অভাব ছিলো। এখন শিক্ষার হার বেশী, সচেতনার হার বেশী তবু জনগন জলাশয়ের প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভব করেন না। জনপ্রতিনিধি বা পৌর মেয়র যত্রতত্র জলাশয় ভরাট করে যে বহুতল ভবন নির্মানের অনুমতি দিয়ে থাকেন তার মস্তিষ্কে কি একবারও আসেনা জলাশয়ের প্রয়োজনের কথা?
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাচাঁতে হলে অবশ্যই আমাদের সচরতন হতে হবে। এখন বৃষ্টির সময়। এই বৃষ্টির জল কি ভাবে কাজে লাগানো যায় সে জন্য প্রতিটি স্কুল কলেজে সচেতনমুলক প্রচারনা চালোনো দরকার। পাড়া মহল্লায় মসজিদ মন্দিরে ওর প্রযোজনীতা তুলে ধরতে হবে।
জল সংরক্ষণ মানে হল জলের অপচয় বন্ধ করে তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। এটি করার জন্য আমাদের ব্যবহারিক অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে জল খরচ না করে পুনঃব্যবহারযোগ্য পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের এখন থেকেই জল সংরক্ষণের দিকেই মনোযোগ দিতে হবে। যদি আমরা এখনই ব্যবস্থা না নেই, তাহলে আগামী দিনে বিশুদ্ধ পানীয় জল পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে।
খোলা কল, অতিরিক্ত স্নানজল, গাড়ি ধোয়ার সময় জল অপচয় — এসব বন্ধ করা জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে, "এক ফোঁটা জল, এক ফোঁটা জীবন।" এই দায়িত্বটা প্রতিটি মানুষকে নিতে হবে।
জল সংরক্ষণে পরিবারের সদস্য, সমাজের লোকজন, শিক্ষার্থী এবং সরকারের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতা বাড়ানো এবং সরকারি স্তরে নীতি প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি।
বৃষ্টির জল একটি প্রাকৃতিক উপহার। ছাদের জল সংরক্ষণ, কুয়া, পুকুর, জলাধার তৈরি করে এই জলকে সংরক্ষণ করা যায়। এতে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর বৃদ্ধি পায় এবং খরার সময় এই জল কাজে লাগাতে হবে।
প্রতিটি সরকারী অফিসে দালাল, ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজ, বালুখোর, মাদক ব্যবসায়ীদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করতে হবে। নগর পরিকল্পনাবিধ, পরিবেশবাদী, সাংস্কৃতি কর্মি, সমাজকর্মীরা যারা আছে তাদের কাজে উৎসাহ যোগাতে হবে।
জল সংরক্ষণ শুধু একটি কাজ নয়, এটি একটি দায়িত্ব। আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে হলে আজ থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে। জল বাঁচান, জীবন বাঁচান — এই বার্তা সবাইকে গ্রহণ করতে হবে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.