বিশেষ প্রতিবেদক
Published:2025-07-08 22:45:15 BdST
ঠিকাদারদের সাথে আঁতাত করে গোপন এপিপি রেট ফাঁসডিএনসিসিতে টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগ
পতিত সরকার আমলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ছিলো আওয়ামী ঠিকাদার সিন্ডিকেটের অধীনে। তাদের তান্ডবে সাধারণ ঠিকাদাররা ছিলেন অসহায়। সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিকের ছত্রছায়ায় ডিএনসিসিতে চলতো টেন্ডার বাণিজ্য। তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এতে উন্নয়নের নামে সরকারি টাকা শুধু তসরূপ হয়েছে। রাস্তা-ঘাট উন্নয়নে শুধু খোড়াখুড়ির কাজ হয়েছে।
যেখানে নগরীর মানুষ রাস্তায় নেমে স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা করবেন তা না হয়ে উল্টো নানা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন নগরবাসী। নগরবাসী এই দুর্ভোগের শিকার হলেও ডিএনসিসিতে টেন্ডার বাণিজ্য থেমে নেই। কারণ দুর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তারা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তাদেরকে কিছু বলার বা প্রতিবাদের সাহস কারো নেই।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ই আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে ভারত যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। রাতের অন্ধকারে সাবেক মেয়র আতিকুল তার দলবল নিয়ে গুলশানের ডিএনসিসি ভবন থেকে পালিয়ে যায়।
৫ই আগষ্টের পর সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের নতুন করে কাজের চঞ্চলতা ফিরে আসে। কিন্তু কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাদের আখের গোছাতে ফের ঐক্য হয়। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের নানাভাবে আপন করে নেন। তাদেরকে অন্ধকারে রেখে শুরু করেন টেন্ডার বাণিজ্য সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি।
জানা যায়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সিন্ডিকেটের কাছে জিম্নি হয়ে পড়েছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ ঠিকাদারগণ। গত ২৫ মে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩টি দরপত্র আহ্বান করা হয়।
ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী (ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং কর্নেল) এর অধীনে এই টেন্ডার আহ্বান করা হয়। যার বিস্তারিত নিম্নরূপ:
> আইডি নং১১১৬৬৬৪, রেফারেন্স নং- ৪৬,১০,০০০০,০৪৩,৯৯,১২৪,২৫,
> টেন্ডারের নামঃ অফিস অব দ্যা এক্সিকিউটিভ ইনজিনিয়ারিং সার্কেল
> কাজের স্থানঃ কনস্ট্রাকশন অফ আরসিসি রোড মিডিয়ান ফর্ম কল্যাণপুর খানপুর খাল টু টেকনিক্যাল ক্রসিং আন্ডার ডিএনসিসি।
ডিএনসিসির অধীনস্থ এই দরপত্রে এ.ই ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এমডি মিজানুর রহমান ও এম এস মোল্লা এন্টারপ্রাইজ অংশগ্রহণ করে। প্রকল্পের জামানতের পরিমাণ ধরা হয় ৮৫০০০০ (আট লাখ পঞ্চাশ হাজার)। এমডি মিজানুর রহমান ও এমএস মোল্লা এন্টারপ্রাইজ এর দর ছিল ৩৫৯৪২৯৩৬.০৬৭। আর এ.ই ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর দর ছিল ৩৯৯৩২৩৮৭.৬৫৯।
এই দুটি প্রতিষ্ঠান একই দর দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ডিএনসিসি জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। যার আইডি নং- ১০৪৮৭৬৩ ও রেফারেন্স নং- ৪৬.১০.০০০০.০৪৩.০৮৩.২৪।
আরেকটি কাজের স্থান হচ্ছে, কনস্ট্রাকশন অফ আরসিসি রোড মিডিয়ান ফর্ম মিরপুর সনি সিনেমা হল টু শাহ আলী মাজার আন্ডার ডিএনসিসি। অধীনস্থ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের নাম এমএস নাহার এন্টারপ্রাইস,
এমএস সাবরিনা এন্টারপ্রাইস, এমএস আব্দুল্লাহ ইনজিনিয়ারিং এন্ড কন্সট্রাকশন এবং এমডি মিজানুর রহমান। টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী এই চার প্রতিষ্ঠানের জামানতের পরিমাণ ছিলো ৪০০০০০ (চার লাখ)। এমডি মিজানুর রহমান ও এমএস সাবরিনা এন্টারপ্রাইস এর টেন্ডার দর ছিল ১২৯৪৫৭৬২.৫৫৮। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের দরও হুবহু মিলে গেছে।
তবে এই ব্যাপারে ডিএনসিসির বক্তব্য হচ্ছে, এটা কোন বিষয় নয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলে প্রশ্ন উঠেছে একই মূল্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের রেট মিলে যাওয়ায় কাজটি কর্তৃপক্ষ কাকে দিবেন। এনিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে, এমএস নাহার এন্টারপ্রাইস এর দর ছিল ১৪২৯১১৭৮.৭১৩ এবং এমএস আব্দুল্লাহ ইনজিনিয়ারিং এন্ড কন্সট্রাকশন ১৪৩৬৬০৭৯.৯১৪। যার আইডি নং১১১৬৭২২ ও রেফারেন্স নং-৪৬.১০.০০০০.০৪৩,৯৯.১২৫.২৫।
অপর কাজের স্থানটি হলো, হযরত শাহ, মিরপুর-১। এই টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে এমএস খালেক এন্টারপ্রাইস, মেসার্স এমএসএ কনস্ট্রাকশন এন্ড ইনজিনিয়ারিং ও এমডি মিজানুর রহমান। তিনটি প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার জামানতের পরিমাণ ছিলো ৩০০০০০ (তিন লাখ)। এমএস খালেক এন্টারপ্রাইস,
মেসার্স এসএমএ কনস্ট্রাকশন এন্ড ইনজিনিয়ারিং ও এমডি মিজানুর রহমান এর টেন্ডারের দর ছিলো ১০২৯৭৫৩৩.৭৬২। উক্ত ৩টি টেন্ডারই গত ২৫ মে প্রকাশিত হয়।
ডিএনসিসির এসব দরপত্রে অংশ নেওয়া বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দর ছিলো একই। কিভাবে হুবহু রেট দেওয়া হলো তার কোন সদুত্তর মিলেনি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ডিএনসিসির প্রশাসক আগেই গোপনে ঠিকাদারকে এপিপি রেট জানিয়ে দেয়। টাকার লোভে একাধিক ঠিকাদারকে এপিপি রেট দিয়ে টেন্ডার বাণিজ্য করা হচ্ছে। বর্তমান প্রশাসক ও নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজশ করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ডিএনসিসির টেন্ডার জালিয়াতির সাথে জড়িতরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোয়ার বাইরে। এতে করে সাধারণ ঠিকাদাররা কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কতিপয় ঠিকাদারদের সাথে আঁতাত করে ঘুষখোর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী নাঈম রায়হান এই প্রতিবেদককে বলেন জনসংযোগ কর্মকর্তার সাথে তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.