July 23, 2025, 3:57 am


নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী

Published:
2025-07-22 15:04:21 BdST

রাজবাড়ী জেলার নদ নদী


রাজবাড়ী জেলায় বেশ কয়েকটি নদী রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে নদী গুলোর নাম পাওয়া যায় সোগুলো হল পদ্মা, গড়াই, চন্দনা, হড়াই, মরা কুমার, যমুনা, চত্রা,হাজড়া খালি,সুতা এবং সিরাজপুর নদী।

পদ্মা -দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার

পদ্মা নদী রাজবাড়ী জেলার উত্তরে অবস্থিত এবং এটি জেলার একটি প্রধান নদী। রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদীর উৎপত্তি হিমালয় পর্বতমালার গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর একটি অংশ। বাংলাদেশে এই গঙ্গা নদী প্রবেশ করার পর পদ্মা নাম ধারণ করে।

এই নদীটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, এবং এরপর এটি রাজবাড়ী জেলার উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পদ্মা নদী রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন স্থান, যেমন- হাবাসপুর, সেনগ্রাম, ধাওয়াপাড়া ঘাট এবং রাজবাড়ী শহর হয়ে দৌলতদিয়ার দিকে প্রবাহিত হয়েছে।

গড়াই-দৈর্ঘ্য ৩২ কিলোমিটার

গড়াই নদী জেলার দক্ষিণাংশে প্রবাহিত
গড়াই নদীর উৎপত্তি গঙ্গা বা পদ্মা নদী থেকে। এটি মূলত কুষ্টিয়া জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজবাড়ী জেলায় প্রবেশ করে। গড়াই নদীটি রাজবাড়ী জেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি নদী।

গড়াই নদী গঙ্গা বা পদ্মা নদীর একটি শাখানদী। কুষ্টিয়া জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গড়াই নদীটি রাজবাড়ী জেলায় প্রবেশ করে। রাজবাড়ী জেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গড়াই নদীটি ঝিনাইদহ, মাগুরা এবং ফরিদপুর জেলার সীমান্ত বরাবর প্রবাহিত হয়েছে। পরবর্তীতে, এটি মধুমতি নদী নামে নড়াইল ও বাগেরহাট জেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সুতরাং, গড়াই নদীর মূল উৎস গঙ্গা বা পদ্মা নদী হলেও, রাজবাড়ী জেলার সাথে এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রয়েছে, কারণ এটি এই জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে।

চন্দনা - দৈর্ঘ্য ৫৩ কিলোমিটার

চন্দনা-বারাশিয়া নদীটি রাজবাড়ী জেলার রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানগঞ্জ ইউনিয়নে প্রবাহিত পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। নদীটি সদর উপজেলা থেকে পাংশা উপজেলার পাংশা পৌরসভার মধ্যে দিয়ে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলা পর্যন্ত চন্দনা নামে পরিচিত এবং মধুখালী থেকে কাশিয়ানী উপজেলা পর্যন্ত বারাশিয়া নামে পরিচিত।

চন্দনা-বারাশিয়ার জলধারা গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার কাশিয়ানী ইউনিয়নে মধুমতি নদীতে পতিত হয়েছে। উৎপত্তি স্থান হতে পাংশা উপজেলার ভেতর দিয়ে কালুখালি পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিমি প্রবাহ একেবেকে প্রবাহিত হয়েছে। তারপর প্রায় সোজা দক্ষিণ দিকে ২০ কিমি প্রবাহিত হয়ে কুমারখালী ও মধুখালির মধ্যবর্তী আড়কান্দি গ্রামে বারাশিয়া নদীর সঙ্গে মিলিত হয় এখানে এই নদীর নাম চন্দনা-বারাশিয়া বা চন্দনা আড়কান্দি।

চন্দনা ও বারাশিয়ার মিলিত স্রোত আরো দক্ষিণে বোয়ালমারী ও কাশিয়ানী উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভাটিয়াপাড়া বাজারের উত্তর পাশে মসলন্দপুর গ্রামের মধুমতি নদীতে মিলিত হয়েছে।

অতীতে চন্দনার সাথে কুমার ও গড়াই নদীর সংযোগ ছিলো। কুমার ও গড়াই উভয়ই পদ্মার শাখা। বর্তমানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, ভূমির বন্ধুরতার পরিবর্তন ইত্যাদির কারণে চন্দনার সাথে এদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফরিদপুরের চিনিকলে আখ পরিবহনের জন্য শুকনো মৌসুমে চন্দনার কয়েকটি স্থানে বাঁধ দেয়া হয়। তখন এটি ক্ষুদ্র জলাভূমিতে পরিণত হয়।

হড়াই-দৈর্ঘ্য ৩৪ কিলোমিটার

হড়াই নদী রাজবাড়ী জেলার একটি নদী। এটি বালিয়াকান্দি উপজেলায় অবস্থিত এবং এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ কিলোমিটার। হড়াই নদীটি মূলত পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করে এবং বালিয়াকান্দি অংশের কিছু এলাকা জুড়ে বয়ে গেছে। একসময় এই নদী দিয়ে বড় নৌকা চলাচল করত, কিন্তু বর্তমানে এটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

মরা কুমার -দৈর্ঘ্য ১৩ কিলোমিটার

মরা কুমার নদীর উৎপত্তি মরা কুমার নদী মূলত ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলা থেকে উৎপত্তি লাভ করে। রাজবাড়ী জেলায় প্রবেশ করেছে। এই নদীটি ফরিদপুর থেকে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলায় প্রবেশ করে পুনরায় ফরিদপুরে প্রবেশ করেছে। বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলা থেকে মরা কুমার নদী পুনরায় ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলায় প্রবেশ করে।একসময় এই নদীটি পদ্মা নদীতে পতিত হতো, তবে বর্তমানে এর গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে।

মরা কুমার নদী বর্তমানে মৃতপ্রায় এবং এর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় আগের মতো আর প্রবহমান নেই।

যমুনা-দৈর্ঘ্য ৫ কিলোমিটার

রাজবাড়ী জেলায় যমুনা নদীর উৎপত্তি নেই। যমুনা নদী ব্রহ্মপুত্র নদের প্রধান শাখা এবং এটি মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। রাজবাড়ী জেলার পাশ দিয়ে প্রমত্তা পদ্মা নদী বয়ে গেছে। রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ নামক স্থানে পদ্মা ও যমুনা নদীর মিলন ঘটেছে।

যমুনা নদীর উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায যমুনা নদীটি ব্রহ্মপুত্র নদের একটি প্রধান শাখা। এটি মূলত বাংলাদেশেউত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত।যমুনা নদীটি বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদীর মধ্যে অন্যতম।

সিরাজপুর -২১ কিলোমিটার

রাজবাড়ী জেলার সিরাজপুর নদীর উৎপত্তি মূলত সিরাজপুর হাওর থেকে। এই হাওরটি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নে অবস্থিত। বর্ষাকালে এই হাওরের পানিপ্রবাহ বেড়ে গেলে তা চত্রা নদী সহ অন্যান্য নদীতে প্রবাহিত হয়।

সিরাজপুর হাওর নদীটি কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মাগুরা জেলার ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে এবং ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৩৫ মিটার গড় প্রস্থ বিশিষ্ট একটি সর্পিল প্রকৃতির নদী।

চত্রা-দৈর্ঘ্য ২৩ কিলোমিটার

চত্রা নদী সিরাজপুর হাওর থেকে উৎপত্তি লাভ করে পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নে প্রবাহিত হয়েছে।
চত্রা নদীর উৎপত্তি রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের সিরাজপুর হাওর থেকে। এরপর এই নদীটি বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নে গড়াই নদীতে পতিত হয়েছে।

চত্রা নদীর উৎপত্তিস্থল হলো রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের সিরাজপুর হাওর।
এটি বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নে গড়াই নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।

সুতা নদী - কোন তথ্য নেই

রাজবাড়ী হারিয়ে যাওয়া একটি নদীর নাম সুতা নদী।সুতানদী ব্রিজ নামে একটি ব্রিজএখনো বিদ্যামান (কইলের বাজার সংলগ্ন)।পদ্মার একটি শাখা রাজবাড়ী সদর চরবেনী নগর থেকে শুরু হয়ে নতুন বাজার হয়ে কোলার হাটের দিকে অগ্রসর হয়ে কুমার নদে মিশেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিসংখ্যানে না থাকলে এই নদীর অস্তিত্ব এখনো বিদ্যমান রয়েছে। এই নদীর নাম বা ইতিহাস রাজবাড়ীর মানচিত্র বা ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছে। এই নদীর শতবর্ষজীবী।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, এই নদীর পাশেই আমার বাড়ি। আমার ছোটবেলায় এই সুতানদী দিয়ে বড়বড় নৌকা যাওয়া আসা দেখেছি। বর্ষার সময় তীব্র স্রোত থাকতো। কৈশোর বেলায় এই নদীতে বড়শি দিয়ে অনেক মাছ ধরতাম। সেই আনন্দের কোন সীমারেখা ছিলনা।

স্থানীয়ভাবে কথিত আছে যে, কোমরপাড়া শাহ জঙ্গী মাজার শরীফের হুজুর ঐ খরস্রোতা নদী খেয়া নৌকায় পাড় হচ্ছিলেন। নদীর মাঝামাঝি অবস্থানে এলে নৌকার মাঝি হুজুরের নিকট খেয়া ভাড়া দাবি করে। কিন্তু হুজুরের নিকট পয়সা না থাকায় তিনি খেয়ার ভাড়া অপর পাড়ে গিয়ে দিবেন বললে নৌকার মাঝি হুজুরকে ঐ মাঝ নদীতে নামিয়ে দেন। হুজুর যেইনা মাঝ নদীতে নামেন তখনই হুজুরের কোমর পর্যন্ত পানি হয়ে যায় এবং হুজুর ধীরে ধীরে নদী দিয়ে হেঁটে এপাড়ে চলে আসেন। তখন থেকেই ঐ জায়গার নাম হয় কোমরপাড়া। এইসব গল্প ছোটবেলায় মুরব্বিদের কাছে শুনতাম। আজ সুতা নদী অনেকেই চিনেনা বা জানেনা। বাস্তবতা হলো এই নদীর অস্তিত্ব এখন বিলীন হয়ে গেছে।

হাজড়াখালি-৫ কিলোমিটার

হাজরা খালি নদীটি রাজবাড়ী জেলার একটি শাখা নদী। এটি মূলত পদ্মা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর এলাকার পদ্মা নদী থেকে এই নদীটি বের হয়ে চন্দনী হয়ে ফরিদপুরের কুমার নদীতে মিশেছে।

হাজরা খালি নদীর উৎপত্তি সম্পর্কে জানা যায় হাজড়া খালি একটি ছোট নদী যা পদ্মা নদী থেকে উৎপন্ন হয়েছে।রাজবাড়ী সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর নামক স্থান থেকে এর যাত্রা শুরু। ফরিদপুরের কুমার নদীতে মিলিত হওয়ার আগে এটি চন্দনী এলাকা অতিক্রম করে। মূলত এটি একটি শাখা নদী যা পদ্মা নদীর পানি বহন করে।স্থানীয়ভাবে এটি হাজরা খালি নদী নামে পরিচিত।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.