শাহীন আবদুল বারী
Published:2025-09-12 20:34:55 BdST
গ্রুপিংয়ে পথহারা ছাত্রদল
২০২৪ সালে ঢাবিতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলো আওয়ামী লীগ। এর আগের ১৬ বছর ক্যাম্পাসেই প্রবেশ করতে পারেনি ছাত্রদল। ঢাবির কোন হলেই কার্যক্রম চালাতে পারেনি সংগঠনটি। কমিটির বাইরে উল্লেখযোগ্য কোন নতুন রিক্রুট নেই দীর্ঘ সময়। তার উপরে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সাধারণ ছাত্রদের মনস্তত্ত্বে যে পরিবর্তন এসেছে, সেটি বিবেচনা করা হয়নি। ছাত্ররা মনে করে ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদল একই স্বভাবের সংগঠন। ছাত্রদল নির্বাচিত হলে একইভাবে তারা শোষিত হবে। ছাত্রদের ছাত্ররাজনীতি নিয়ে এই যে 'সরলীকরণ' কিংবা 'পূর্বজ্ঞান' সেটাকে বদলে দিতে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে কি ব্যাপকভিত্তিতে কোন কাজ করার সুযোগ পেয়েছে? উল্টো গেল আগস্টে হল কমিটি গঠনের পর সেখানে অপরাপর ছাত্র সংগঠনগুলো বিক্ষোভ করেছে। তখন প্রশাসন আবারো পুনরোক্তি করেছে-'নিষিদ্ধই থাকবে ছাত্ররাজনীতি'। এমন প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলকে কিভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়? বিএনপি কেন এই দাবি তুলতে পারেনি যে, ক্যাম্পাসে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। আগে ছাত্ররাজনীতি বহাল করতে হবে, তারপর ক্যাম্পাস এবং হলে হলে ছাত্রদের নিয়ে কাজ করার সময় দিতে হবে। এরপর নির্বাচন হবে।
প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালানোর ধরণ আর ছাত্রদলের কাজের ধরণ কি এক? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে কোন ক্রমেই এক নয়।
বিশ্লেষকগণ বলেছেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ অথচ ডাকসু নির্বাচন। কী হাস্যকর! ডাকসু নির্বাচনের সাথে জড়িত বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের মাথায় এই প্রাথমিক জ্ঞানটুকুও নেই। এদের কোন এনালাইসিস নেই, পূর্ব জরিপ নেই। এরা মনে করে দাঁড়ালেই পাশ। এই ভুল ধারণা থেকেই ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভরাডুবি হয়েছে।
দলটিতে অধুনা কিছু মাইগ্রেটেড বুদ্ধিজীবী যুক্ত হয়েছে। এরা মূলত লায়াবেলিটিস। এদের ন্যারেটিভ খুবই দুর্বল, অনেক ক্ষেত্রে রিজেক্টেড। অর্জন কেবল চমৎকার তিনটি ছেলে। ভিপি-জিএস-এজিএস প্রার্থী। এরা স্বল্প সময়ে 'দলীয় অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং' পেছনে ফেলে ইতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি করতে পেরেছিল।
এই তিনজন ছেলেকে এবার কাজে লাগানো দরকার। পুরনোদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়মিত ও মেধাবী ছাত্রদের ছাত্রদলে ভিড়িয়ে গুনগত পরিবর্তন আবশ্যক। উগ্রতার বদলে নমনীয়তাকে স্থান দিতে হবে। ছাত্রদল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেচাবিক্রি করে আসা 'ওই সিন্ডিকেট' ভেঙ্গে দিতে হবে। দীর্ঘ জুলুমের শিকার সরলপ্রাণ নেতৃত্ব তারেক রহমানের নাম ভেঙ্গে খাওয়া বন্ধ করতে হবে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই, নতুন বার্তা আমলে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ৫ আগস্টের পর 'জাতীয়তাবাদী রাজনীতি'কে ধসিয়ে দিতে অনেক পক্ষ কাজ করছে। সেই জায়গায় 'অপকর্মের' বদলে জনমুখী কাজ ও কথা দিয়ে 'নিজেদের উদার রাজনীতি'র উপর ভর করে মানুষের পাশে থাকতে হবে। নতুন ন্যারেটিভ দাড় করাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে হবে। জনগনকে এই ভরসা দিতে হবে যে, বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভরাডুবি হয়েছে। বিএনপির জন্য একটি ‘কঠিন বার্তা’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ডাকসুর নির্বাচনে ইতিহাস গড়েছে ছাত্রশিবির। নির্বাচনে অধিকাংশ পদে জয় পেয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরা।
অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পড়েছে ইতিহাসের অন্যতম বড় ধাক্কায়। শুধু পরাজয় নয়, অনেক পদে দ্বিতীয় স্থানেও পৌঁছতে পারেননি তাদের প্রার্থীরা। ছাত্রদল এমন একটি ধাক্কা খেল, যা বিগত সরকারের আমলেও তাদের খেতে হয়নি।
সাংগঠনিক বিপর্যয়ে ছাত্রদল
ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান রাজপথের নেতারা বলছেন, সাংগঠনিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত শহিদ জিয়াউর রহমান গঠিত ছাত্রদল। ৫ আগস্টের আগের ছাত্রদল আর বর্তমান সময়ের ছাত্রদলের মধ্যে পার্থক্য অনেক। প্রশ্ন হলো ৫ আগস্টের পরে ছাত্রদলকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করা হলো কেন?
ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং, আধিপত্য বিস্তার, যোগ্যদের অবমূল্যায়ন ও নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা অনিশ্চয়তার কথা উঠে এসেছে। যার কারণে ডাকসুতে ভরাডুবি ও রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে ছাত্রদল। এজন্য নতুন কমিটি চাইছেন ছাত্রদলের অনেকেই। তাদের দাবি- ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছিরের পদত্যাগ করা উচিত। কারণ তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতৃত্বহীনতা এবং শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুধাবনে ব্যর্থতা- এসবই ছাত্রদলের বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ক্যাম্পাসে উপস্থিত না থাকা, সারা দেশে বিএনপির কিছু নেতার অরাজনৈতিক আচরণ, দুর্বল প্রচার এবং বিভক্ত নেতৃত্বের কারনে শিক্ষার্থীদের কাছে আস্থাহীন হয়ে পড়েছে সংগঠনটি।
অপরদিকে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরপরই নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে সচেষ্ট হয় ইসলামী ছাত্রশিবির। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে নানা কর্মসূচি, আহতদের পাশে দাঁড়ানো এবং শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা দ্রুত আলোচনায় আসে। প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রেও নতুনত্ব দেখিয়েছে সংগঠনটি। নিজেদের পরিচিত নেতৃত্বের বাইরে গিয়ে তারা নারী শিক্ষার্থী, জুলাই আন্দোলনে আহতদের প্রতিনিধি এবং সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীকে প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত করে চমক দেখিয়েছে। এই বহুমাত্রিক কৌশল দাগ কেটেছে শিক্ষার্থীদের মনে। প্রচারণায় তারা সংগঠিত ও সক্রিয় উপস্থিতি বজায় রেখেছে। প্রতিটি হল এবং বিভাগে ছড়িয়ে পড়েছে তাদের বার্তা। এর প্রতিফলন মিলেছে নির্বাচনের ফলে।
বিশ্লেষকদের মতে, এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৯০ সালে ডাকসু নির্বাচনে জয়ী হওয়া প্রধান ছাত্রসংগঠন গুলোর একটি ছিল ছাত্রদল। অথচ এবার সংগঠনটি ডাকসুতে ২৮টি পদের একটিতেও জিততে পারেনি। বিপরীতে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতে জয়ী হয়েছে, যা স্বাধীনতার পর থেকে সংগঠনটির সবচেয়ে বড় সাফল্য।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নির্বাচনের আগে ডাকসুতে এমন ভরাডুবির পর ছাত্রদলে ব্যাপক সংস্কারের দাবি রাখে। কেননা ঐতিহ্যগতভাবে জাতীয় নির্বাচনে ছাত্রদল মূল দলের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চাঁদাবাজি, দখল ও কোন্দলে ভাবমূর্তি সংকট ধারণ করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিএনপি ও ছাত্রদলের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। এটা শুধু ছাত্রসংগঠনের নির্বাচন নয় বরং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য একটি কঠিন বার্তা বহন করছে।
অনেকে মনে করেছেন, তারা যদি ছাত্রদলকে ভোট দেন এবং জেতান, তাহলে শেষ পর্যন্ত বিএনপি শক্তিশালী হবে। এটা তারা চাননি। কারণ দলটি ইতিমধ্যেই নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। এই কারণেই ছাত্রদল ডাকসুতে সম্মানটুকু হারিয়েছে। নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থেকে ছাত্রলীগ বাদ পড়ায় সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে শিবির। এই নির্বাচনে ছাত্রদলের ব্যর্থতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুধু বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেনি বরং জাতীয় পর্যায়ে দলটির জন্য নতুন চ্যালেঞ্জও সৃষ্টি করেছে বলে দলীয় নেতা ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই পরাজয় থেকে বিএনপি শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হলে সামনে ফল হবে ভয়াবহ।
এই বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান বলেছেন, ‘ডাকসু নির্বাচন বিএনপির জন্য একটি শিক্ষা। দলটি যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে দেখছিল, সেখানে এখন পরিবর্তন আসতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে কৌশলগতভাবে কাজ করতে হবে। তাছাড়া ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না, এটি সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়বে। জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠন দেখিয়েছে, এখন বিএনপিই তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনের পর জামায়াত নতুন গতি পেয়েছে এবং বিএনপিকে এই বাস্তবতায় আরও মনোযোগ দিতে হবে।
অধ্যাপক হাসানুজ্জামান বলেন, ‘শিবিরের জয় জামায়াতকে বিপুল শক্তি জোগাবে। অবশ্যই এটি তাদের জন্য সুখবর। বিএনপিকে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সামনে এগোতে হবে। তাছাড়া চাঁদাবাজি, দখল ও দলীয় কোন্দল ইতিমধ্যেই বিএনপির ভাবমূর্তিকে সংকটে ফেলেছে, যার প্রতিফলন ডাকসু নির্বাচনে স্পষ্ট।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের বর্তমান সহ-সভাপতি ও সভাপতি প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ডাকসু নির্বাচনের ফল মানুষের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ছাত্রদলের এমন ভরাডুবি কেউ মানতে পারছেন না। এক শ্রেণির মানুষ ভাবছে, ছাত্রদলের হার আর বিএনপির হারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যার কারণে অনেকেই এখন ছাত্রদলের কমিটি ভাঙার কথা বলছেন। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক যুগ্ম সম্পাদক জানান, ছাত্রদল ৫ আগস্টের পর চাঁদাবাজিতে যুক্ত হয়ে মরে গেছে। একে জীবিত করতে হলে ডাইনামিক ছাত্রনেতাদের সামনে আনতে হবে।
ছাত্রদলের এক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, ডাকসুতে জেতার পর শিবির নেতারা এখন ব্যাপক আলোচনায়। জাতীয় নির্বাচন এলে তারা এলাকায় ফিরে তাদের এই অর্জনকে কাজে লাগিয়ে ভোট চাইবেন এবং এর প্রভাব নির্বাচনে পড়বেই। এর থেকে শুধু ছাত্রদল না বিএনপিরও শিক্ষা নেয়া উচিত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, ছাত্রদলসহ বিএনপির সব সংগঠনকে শক্তিশালী করা ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনে কাজ করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ছাত্রদলের কমিটি ভাঙতে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী দলের একটি প্রতিনিধিদল কাজও শুরু করেছে। কারণ, ডাকসুর এমন ফলাফলে তারেক রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগসাজশ করে শিবির ডাকসু নির্বাচনে জয় পেয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ বলেছেন, এই ফল জাতীয় নির্বাচন বা রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে।
দীর্ঘদিন একই কমিটিতে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
পুরোনো মুখদেরই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দায়িত্ব দেওয়ার সংস্কৃতি, বছরের পর বছর ধরে একই কমিটি এবং আঞ্চলিকতার প্রবল প্রভাবে নেতৃত্ব বিকাশে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। অথচ একসময় এই সংগঠনটির ওপর ভর করেই সারা দেশে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছিল দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি।
বিপুলসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই সংগঠন পরিচিতি লাভ করেছিল। তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ছাত্রদলের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তবে সময়ের ব্যবধানে এখন আর সেই দিন নেই ছাত্রদলের।
দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকায় ধীরে ধীরে মিইয়ে গেছে ছাত্রদলের দাপটও। সক্রিয় কার্যক্রম তো দূরের কথা, দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ছিল না কমিটি। বিগত সরকারের সময় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের মারমুখী অবস্থানে সারা দেশে ‘কোণঠাসা’ হয়ে পড়ে ছাত্রদল। এরপর ডাকসুর নির্বাচনে হেরে সংগঠনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সাবেক ও বর্তমান নেতারা অনেকেই উদ্বিগ্ন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান জানান, প্যানেল ঘোষণার পর ছাত্রদলের বর্তমান ও প্রাক্তন সবাই এক এবং অভিন্ন হয়ে কাজ করলেও ছাত্রদল জয়লাভ করতে পারেনি। এরও কারণ রয়েছে, তা হচ্ছে- নতুন জেনারেশনকে চিন্তা করে প্যানেল করা উচিত ছিল।
ডাকসুর নির্বাচন পরবর্তী অনেকের অভিব্যক্তি ও পর্যালোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলেছে। নিঃসন্দেহে ডাকসুর নির্বাচন তাৎপর্য বহন করে, কিন্তু ডাকসুকে দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট ভাবার অবকাশ কতটা যুক্তিসংগত সেদিকে না তাকিয়ে, শিক্ষনীয়, করনীয়, বর্জনীয়, দলকে সুসংগঠিত করাই বিবেচ্য বলে মনে করেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ।
তারা বলেন, ডাকসু নির্বাচনে সফলতা, ব্যর্থতার তথ্য সংগ্রহ করে নিজেদের সেই মোতাবেক গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। যা আমাদেরকে নিয়ে যেতে পারে কাঙ্খিত লক্ষ্যে। বিগত পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ১৭ বছরের দুর্বার আন্দোলন সর্বোপরি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন হয়। এদেশের আপামর জনতার আকাংক্ষা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে সুন্দর, সমৃদ্ধ ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়াতে। এটা সম্ভব হবে অন্তর্বর্তী সরকারের অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে এই দেশের সর্ববৃহৎ এবং সর্বোচ্চ জনপ্রিয় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল অগ্রনী ভুমিকা রাখবে এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
বিগত ১৭ বছরে বিএনপির আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে একটি অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। পতিত স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের চাওয়া এই সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বিগত পতিত স্বৈরাচার সরকারের কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করে এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলটির নেতাকর্মীরা প্রতিষ্ঠাতার আদর্শ ও নীতিতে উদ্ধুদ্ধ হয়ে মুল দল ও অঙ্গসংগঠন সমুহকে সুসংগঠিত করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.