September 15, 2025, 6:16 pm


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-09-15 16:41:44 BdST

দুদকের কঠোর নজরদারিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী-ঠিকাদার বিআইডব্লিউটিএ'তে আওয়ামী দোসররা এখনো সক্রিয়


বিআইডব্লিউটিএ'র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুর রহিম (মেরিন) এর রুমে প্রকাশ্যে ঘুষের ভিডিও ভাইরালের ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন অভিযুক্ত রহিম-শাজাহান সিন্ডিকেট।

ঘুষের ভিডিও নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের মধ্যে কাজের স্থবিরতা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বিষয়টি নিজে তদারকি করছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, এই ঘটনায় দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম গত ১০ সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিএ'তে অভিযান পরিচালনা করে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র বলছে, জ্বালানি তেল সরবরাহের ঠিকাদারি কাজ দিতে ঘুষ নেয়ার অভিযোগে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে দুই কর্মকর্তা বরখাস্ত হলেও এই ঘুষ লেনদেনের নাটের গুরু বিআইডব্লিউটিএ'র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মো. শাজাহান আছেন বহাল তবিয়তে।

অভিযোগ রয়েছে, ঘুষ নেয়ার অভিযোগে বরখাস্ত নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের দুই কর্মকর্তা পরিচালক মো. শাজাহানের ক্যাশিয়ার। সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএ'র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (মেরিন) মো. আব্দুর রহিমের রুমে ঘুষ লেনদের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিনই বিআইডব্লিউটিএ'র বিভিন্ন জাহাজে সরবরাহকারী ঠিকাদারি একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ নেন অতিরিক্ত পরিচালক মো. আব্দুর রহিম। ঘটনা জানাজানি হলেও রহস্যজনক কারণে ধামাচাপা দেয় বিআইডব্লিউটিএ। এই ঘটনায় ১০ সেপ্টেম্বর দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযান পরিচালনা করলে দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিআইডব্লিউটিএর নৌ সংরক্ষণ এবং পরিচালন বিভাগের জ্বালানি তেলের ঠিকাদারি কাজ দেয়ার বিনিময়ে উৎকোচ লেনদেন-সংক্রান্ত একটি ঘটনা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের নির্দেশে ওই বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (মেরিন) মো. আব্দুর রহিম এবং উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুল করিম খানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এই ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত নাটের গুরু ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায়
সত্য উদঘাটনে কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দুদকের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, বিআইডব্লিউটিএ তেল সরবরাহের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে দেখা যায় মেরিন বিভাগের এক কর্মকর্তার রুমে ঘুষ লেনদেন হচ্ছে। দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অনুসন্ধান করে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেবে।

বিআইডব্লিউটিএর একটি সূত্র জানিয়েছে, নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (মেরিন) মো. আব্দুর রহিম এবং উপরিচালক ওবায়দুল করিম (নারায়ণগঞ্জ) মূলত ওই বিভাগের পরিচালক মো. শাজাহনের ঘনিষ্ঠ। শাজাহানের ক্যাশিয়ার হিসেবে ওই বিভাগের ঘুষ নেন আব্দুর রহিম ও ওবায়দুল করিম। বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঘুষের বিনিময়ে কাজ দেয়ার বিষয়টি পরিচালক শাজাহানের হয়ে মধ্যস্থতা করেন বরখাস্তকৃত দুই কর্মকর্তা আব্দুর রহিম এবং ওবায়দুল করিম। আব্দুর রহিম নারায়ণগঞ্জ বিআইডব্লিউটিএ'র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগে কর্মরত। জাহাজের তেল বিতরণ, বন্দর রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন কাজের দায়িত্বে রয়েছে রহিম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন
বিভাগে গত ১০ বছর ধরে একই চেয়ারে পদায়ন রয়েছেন পরিচালক মো. শাজাহান। ওই বিভাগে তার এলাকার লোকজনকে পোস্টিং করিয়ে একচেটিয়া দুর্নীতি ও ঘুষের আখড়া তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সাবেক নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খানের সুপারিশে মো. শাজাহান নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক পদে পদায়ন হন। এরপর থেকে তিনি এ চেয়ারের বহাল তবিয়তে। তার বিরুদ্ধে ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি বিআইডব্লিউটিএ।

আরো অভিযোগ উঠেছে, চেয়ারম্যানের আত্নীয় পরিচদানকারী বিনা নামে এক ব্যক্তি এই ঠিকাদারি কাজের তদবির করেছেন। অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুর রহিম ও পরিচালক শাজাহান উক্ত বিভাগে একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ঠিকাদারগণ।

গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার নবাবগঞ্জ থেকে বিআইডব্লিউটিএ'র সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি শামসুদ্দোহা খন্দকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার নিজস্ব রিসোর্ট “ওয়ান্ডারল্যান্ড গ্রিন পার্ক” থেকে তাকে আটক করা হয়। নবাবগঞ্জ থানার ওসি মমিনুল ইসলাম জানান,
পুলিশের সাবেক এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দুর্নীতির জন্য দীর্ঘদিন ধরে কুখ্যাত ছিলেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিভিন্ন নদী খনন প্রকল্পের টেন্ডার থেকে কমিশন আকারে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া, নদী দখল করে গড়ে তোলা শিল্পকারখানার মালিকদের কাছ থেকেও বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেন। এসব অবৈধ আয় দিয়ে তিনি নবাবগঞ্জে শতাধিক বিঘা জমির উপর খামারবাড়ি গড়ে তুলেছিলেন। যেখানে বিনিয়োগ করা হয়েছে কয়েক শত কোটি টাকা। তিনি বিআইডব্লিউটিএ'তে চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে তার অধিনস্থদের সাথে খুবই খারাপ আচরণ করতেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতিমধ্যেই শামসুদ্দোহা ও তার স্ত্রী ফেরদৌসী সুলতানা-এর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, শামসুদ্দোহা ও তার স্ত্রীর কাছ থেকে মোট ৬৬ কোটি ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ৯৮১ টাকার সম্পদ গোপন ও অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান থাকাকালীন শামসুদ্দোহা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে বিপুল অর্থ আয় করেন। এই অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সন্দেহজনক উৎস থেকে আসা অস্বাভাবিক লেনদেনে জমা করা হয়। তিনি ২১ কোটি ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যাংক হিসাব থেকে তুলে নিজের সম্পদের উৎস ও মালিকানা গোপন করার চেষ্টা করেছিলেন।

এছাড়া, দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৮ কোটি ৪৪ লাখ ১০ হাজার ২২১ টাকার সম্পদ গোপন এবং মিথ্যা তথ্য প্রদান করার প্রমাণ মেলে। দুদকের অনুসন্ধানে আরও ২ কোটি ৮৭ লাখ ৩ হাজার ৭৮ টাকার অবৈধ সম্পদের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক আইন, ২০০৪ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ আইনের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। একইভাবে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ২৮ কোটি ৪৭ লাখ ৩ হাজার ৮৯১ টাকার সম্পদ গোপন এবং ২৭ কোটি ৪৮ লাখ ৮২ হাজার ৪৯১ টাকার অজ্ঞাত আয়ের সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ'তে অচলাবস্থা সৃষ্টির অন্যতম কারিগর, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল আলম হানিফের ভাগ্নে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খান। সুলতানের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা সহ রাজধানীর একাধিক থানায় খুনের মামলা রয়েছে। ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আসামি।

বিআইডব্লিউটিএ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ডেজিং বিভাগে পোস্টিং ছিল তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুলতান আহমেদ খান। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফের ভাগ্নে পরিচয়ে বিগত ১৫ বছর এককভাবে বিআইডব্লিউটিএ'কে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। বদলি, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন সুলতান সিন্ডিকেট। সুলতানের একান্ত বিশ্বস্ত শ্রমিক লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সনজিব কুমার দাস।
গত বছরের ২ অক্টোবর সুলতান আহমেদ খানকে বিআইডব্লিউটিএ ডেজিং বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ চেয়ারম্যানের দপ্তরে ফাইল বন্দী হয়ে পড়ে আছে।

সুলতান পাবনা ও কুষ্টিয়া ড্রেজিং প্রকল্পের পরিচালক নিয়োগ পেয়ে সরকারি ১২শ’ কোটি টাকা কাজ না করে লুটপাট করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, নদী খনন প্রকল্পের মাটি বিক্রি করেই প্রায় ৬-৭শ কোটি টাকা লোপাট করে নিয়েছেন ড্রেজিং বিভাগের এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। এসব ঘটনায় গত বছরের ২ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সুলতান আহমেদ খানকে নৌপরিবহন অধিদপ্তরে সমপদে প্রেষণে পদায়ন করা হয়েছে।

১৯৯৬ সালে বিআইডব্লিউটিএ'তে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে চাকরিতে প্রবেশ করেন সুলতান আহমেদ খান। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১০ জন নিয়োগের কঠোর সিদ্ধান্ত থাকলেও শুধু মামার জোরে ১৩ নম্বর ব্যক্তিসহ সর্বমোট ১৩ জনকেই চাকরি দিতে বাধ্য করা হয় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে। এতে বেতন ভাতা বাবদ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে হয়েছে সংস্থাটিকে।

মামার আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় সম্পূর্ণ গায়ের জোরে একের পর এক পদোন্নতি পেয়েছেন। সুলতান এখন শতকোটি টাকার মালিক। উত্তরার ৩ নং সেক্টরের ৪ নাম্বার রোডের ৪৭ নাম্বার বাড়ির একটি আলিশান ফ্ল্যাটে থাকেন। পাবনার আমিনপুর থানার ভাটিকয়ায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সুলতান

অভিযোগ রয়েছে, সুলতান ভাটারা থানায় খুনের মামলায় যাতে গ্রেফতার না হোন সেজন্য তিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য মোটা দাগের টাকা ঘুষ দিয়েছেন। বিএনপির একজন নেতা তাকে শেল্টার দিচ্ছে বলেও জনশ্রুতি আছে। ওই নেতার দাপটে তিনি বিভিন্ন মহলে বলে বেড়াচ্ছেন তার উপরের মহলে লোক থাকায় তাকে পুলিশ গ্রেফতার করবেনা। দুদকেও তার এক বন্ধু চাকরি করেন বলে দুদকের মামলায় অব্যাহতি পাবেন। সুলতানকে সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান এবং প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সমীহ করতেন।

দুদক সূত্র বলছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কতিপয় কর্মকর্তা মিলে দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তারা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন, নৌ-বন্দর ইজারা, নদীর ড্রেজিং, নদী থেকে বালু উত্তোলন, জাহাজ চলাচলের অনুমোদনসহ বিভিন্ন কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ইতিমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ'র ঘুষ, দুর্নীতিবাজ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী দুই ডজন কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটের একটি টিম এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করছে। সূত্র জানিয়েছে, ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে সাত কর্মকর্তারা তাদের অবৈধ টাকা বৈধ করতে স্ত্রীদের জাহাজের মালিক বানিয়েছেন এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদ কিনে দিয়েছেন। আরো ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান টিম মাঠে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এরা পতিত সরকারের আমলে সংস্থা টিকে লোকসানের মুখে ঠেলে দিয়ে নিজেরা আলিশান বাড়ি ও পাহাড় সমপরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

দুদকের তথ্যমতে, ২০২১ সালে বিআইডব্লিউটিএ’র একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চারটি পৃথক অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। একই বছরের অক্টোবর মাসে বিআইডব্লিউটিএ’র ২ ডজন কর্মকর্তা ও তাদের স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্ত করতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে দুদকে চিঠি পাঠানো হয়। এরপরই দুদক তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অনুসন্ধানে মাঠে নামে।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৭ জন কর্মকর্তাসহ মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮০ লাখ বিনিয়োগ করে ডজন রোজ লিমিটেড নামে একটি জাহাজ কোম্পানি গঠন এবং সংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের নামে শেয়ার ক্রয়ের তথ্য পাওয়া যায়। একইসঙ্গে তাদের স্ত্রীদের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ফ্ল্যাট, প্লট ও ব্যাংক ব্যালেন্স করার তথ্য রয়েছে।

জানা গেছে, দুদক যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে তাদের একজন হলেন বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী শামীম আক্তার। শফিকুল ইসলাম ১৯৮৯ সালে বিআইডব্লিউটিএ’তে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি চাকরিতে যোগদানের পর স্ত্রীকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দেখান। শফিকুল ইসলাম ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পরিচালক (সচিব) হিসেবে অবসরে যান। এর আগে তিনি ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল স্ত্রী শামীমা আক্তারের নামে রোজ ডজন কোম্পানিতে ১৫ লাখ টাকা শেয়ার কেনেন। তার রাজাবাজার এলাকারে মাসুম ভ্যালী ভবনের দ্বিতীয় তলায় ১১৫০ বর্গফুট ও কার পার্কিংসহ একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। কুড়িগ্রামের তরকপুরে ২২ শতাংশ জমিতে পুকুর খনন ও টিনসেড বাড়ি নির্মাণ করেন। তার ধানমন্ডিতে ৮৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট আছে। এসব সম্পদের মূল্য দেখান ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

এছাড়া তার ৮০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, লিজেন্ড-১০ শিপিং লাইন্সে ৪০ লাখ টাকার শেয়ার, এমভি শুভেচ্ছা-১ এ ১৯ লাখ ২৫ হাজার টাকার শেয়ার, জেমস্টোনে ১০ লাখ টাকার শেয়ার, একটি জিপ গাড়ি ও ১৫ ভরি সোনাসহ আবসাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স মালামাল রয়েছে। তার স্ত্রী শামীমা আক্তারের বগুড়া সদরের ছয়পুকুরিয়ায় আড়াই শতাংশ জমি ও ৬টি দোকান, ঢাকার পশ্চিম জাফরাবাদে ১২৩০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, মোহাম্মদপুরে ১২৩০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া তার রোজ ডজন কোম্পানিতে ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা শেয়ার, জেম স্টোন শিপিং লাইন্সে ৪০ লাখ টাকা, রিলায়াবল অয়েল কোম্পানিতে ৪৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ, একটি প্রাইভেট কার ও ২০ ভরি স্বর্ণসহ আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স মালামাল রয়েছে। শামীমা আক্তার ট্যাক্স দিয়ে ১ কোটি ১৬ লাখ ১৮ হাজার কালো টাকা সাদা করেছেন। আয়কর নথির অনুযায়ী শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের সম্পদ রয়েছে। বাস্তবে তাদের সম্পদের মূল্য আরও অনেক বেশি। এসব সম্পদের মধ্যে ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।

পরিচালক রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাবিহা পারভীনের অভিযোগ

রফিকুল ইসলাম ১৯৯২ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। তার স্ত্রী সাবিহা পারভীন একজন গৃহিণী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। রফিকুল ইসলাম তার স্ত্রীর নামে ২০২০ সালে লিজেন্ড-১০ কোম্পানির মর্নিং ভয়েজ নামীয় নৌযানে ২০ লাখ টাকার শেয়ার কিনেন। রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ১২ জমি শতাংশ রয়েছে। একই থানার ছোট বনগ্রামে ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ জমি, রাজধানীর আদাবরে পার্কিংসহ ১৫৬৩ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, বাড্ডায় ২০ জনের সমিতি গঠন করে ১০ কাঠা জমি ক্রয়, রাজধানীর একটি আবাসিক প্রকল্পে ২ কাঠার প্লট ক্রয়, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ভাইয়ের কাছ থেকে ৪০ শতাংশ, মায়ের কাছ থেকে সাড়ে ২৫ শতাংশ জমি পেয়েছেন বলে আয়কর নথিতে উল্লেখ করেন। তিনি এজমালি সম্পত্তি থেকে ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ পেয়েছেন বলে জানান।

তার স্ত্রীর নামে সাভারের কাউন্দিয়ায় সাড়ে ৭ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। তাদের দুজনের ৬৫ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। আয়কর নথিতে তাদের ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে। বাস্তবে এসব সম্পদের মূল্য আরও অনেক বেশি। তাদের দখলে থাকা সম্পদের মধ্যে ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার তথ্য রয়েছে।

যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলী ও তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ

গুলজার আলী ১৯৯৪ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। তিনি স্ত্রী সালমা হককে একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে স্ত্রীর নামে লিজেন্ড শিপিং লাইন্সে ২০ লাখ এবং ২০১৮ সালের এপ্রিলে রোজ ডজন শিপিং কোম্পানিতে ১৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনেন। গুলজার আলীর ৪ শতাংশ জমিতে টিনশেড বাড়ি, একটি আবাসন প্রকল্পে শেয়ারে ১০ কাঠা জমি ক্রয় ও সেখানে বাড়ি নির্মাণে সাড়ে ১৭ লাখ টাকা ব্যয়, ব্যাংকে ৭৫ লাখ জমা, ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র. ৫ ভরি স্বর্ণসহ কয়েক লাখ টাকার আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স মালামাল রয়েছে। তার স্ত্রী সালমা হকের পৈত্রিক জমিতে ৩০ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ, কেরানীগঞ্জের আটিবাজার এলাকায় তিন কাঠা জমি ক্রয় করেন। আয়কর নথি অনুযায়ী গুলজার আলী ও তার স্ত্রীর ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা মূল্যের রয়েছে। বাস্তবে তাদের সম্পদের মূল্য আরও কয়েকগুণ বেশি। এসব সম্পদের মধ্যে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এছাড়া তাদের বেনামে আরও সম্পদ রয়েছে।

উপ-পরিচালক শহীদুল্লাহ ও তার স্ত্রী ফাতেমা পারভীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

শহীদুল্লাহ ২০০৫ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। তার স্ত্রীও একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে রোজ ডজন শিপিং কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করেন। এসব শেয়ার ২০২০ সালে বিক্রি করে দেন। তিনি ২০০০ সালের ইস্টার্ন হাউজিংয়ে ৯৩ লাখ টাকায় ২ কাঠা জমি ক্রয় করেন। এছাড়া জোয়ার সাহারা প্রকল্পে ৫ কাঠা জমির ৮ ভাগের ১ অংশের মালিক তিনি। তার ২৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৪৮ লাখ টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত, আড়াই লাখ টাকার প্রাইজবন্ডসহ কয়েক লাখ টাকার আসবাবপত্র ও ইলেক্ট্রনিকস মালামাল রয়েছে। এছাড়া স্ত্রীর নামে সাভারের কাউন্দিয়ায় সাড়ে ৭ শতাংশ জমি, ঢাকার ধানমন্ডিতে ১৬০২বর্গফুটের ফ্ল্যাট ও নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ৩ কাঠা জমি ক্রয় করেছেন। তাদের দুজনের ৬৮ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। আয়কর নথিতে তাদের সম্পদের পরিমাণ ৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। বাস্তবে তাদের যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার প্রকৃত মূল্য কয়েকগুণ বেশি। এসব সম্পদের মধ্যে ১ কোটি ১২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এর বাইরে তাদের বেনামি সম্পদ রয়েছে।

উপ-পরিচালক আবু সালেহ কাইয়ুম ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আবু সালেহ কাইয়ুম ২০০৫ সালে চাকরিতে যোগদান করেন। তার স্ত্রী ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি ২০ লাখ দিয়ে স্ত্রীর নামে লিজেন্ড শিপিং লাইন্সের শেয়ার ক্রয় করেন। ২০২২ সালে সেই শেয়ার বিক্রি করেন। আবু সালেহ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বেতন-ভাতা পেয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। এর মধ্যে পারিবারিক ব্যয় হয়েছে ৫০ লাখ ১ হাজার টাকা। তার প্রায় ১৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। তিনি বিয়ের সময় ১০ ভরি ও তার স্ত্রী ৪৫ ভরি স্বর্ণ উপাহার পেয়েছেন। আয়কর নথি অনুযায়ী এই দম্পতির সম্পদের মূল্য ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এসব সম্পদের মধ্যে ২০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তাদের সম্পদের মূল্য এবং অবৈধ সম্পদের পরিমাণ আরও অনেক বেশি।

উপ-পরিচালক আবু বকর ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহানের বিরুদ্ধে অভিযোগ

আবু বকর সিদ্দিক ১৯৯৫ সালে নির্বাহী সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে অবসরে আছেন। আয়কর নথিতে তাদের ৫ কোটি ২০ লাখ টাকার সম্পদ থাকার তথ্য রয়েছে। বাস্তবে তাদের সম্পদের মূল্য ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। এসব মধ্যে বিপুল পরিমাণ অবৈধ উপায়ে অর্জন করা হয়েছে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জরিনা বেগম ও তার স্বামী মুকবুল আহমেদের অভিযোগ

বিআইডব্লিউটিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জরিনা বেগমের স্বামী মুকবুল আহমেদ। এই দম্পতি বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এর মধ্যে জরিনা খানম ও তার স্বামী মুকবুল আহমেদ আশুলিয়া মডেল টাউনে ৩ কাঠা জমি রয়েছে। যার মূল্য দেখানো হয় ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাউনিয়া মৌজায় ৪১ দশমিক ২৫ অযুতাংশ জমি, যারা মূল্য দেখানো হয় ৭ লাখ ৫০ হাজার এবং হাজারীবাগ মনেশ্বর রোডে ১২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের মূল্য ২ লাখ ৬১ হাজার। এছাড়া তাদের স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিক্স মালামালসহ মোট সম্পদের মূল্য ২ কোটি ৮২ লাখ ১৮ হাজার ৮৯৯ টাকা দেখানো হয়। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে আয় দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ ৬৫ হাজার ৪৩৬ টাকা। অর্থাৎ তাদের অর্জিত সম্পদ থেকে আয়ের পরিমাণ ৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৭ টাকা বেশি। অভিযোগ রয়েছে, জরিনা খানম ও তার স্বামীর সম্পদের যে মূল্য দেখানো হয়েছে তার প্রকৃত মূল্য অনেক বেশি।

দুদক সূত্রমতে, বিআইডব্লিউটিএ'র যাদের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা বা অভিযোগ রয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিষয়ে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এরা পতিত সরকারের আমলে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এদের বেশির ভাগ সম্পদ করেছেন স্ত্রী এবং বেনামে। পতিত সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিত থাকলেও তারা অনেকে এখন মুখোশ পাল্টিয়ে বিএনপি পন্থী সেজে গেছেন। সূত্রমতে, একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ( সাবেক ড্রেজিং শাখা) নিজের অপকর্ম এবং দুর্নীতি থেকে বাচঁতে মিডিয়ায় পজেটিভ নিউজ করানোর জন্য মোটা দাগের টাকা খরচ করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।

সূত্রমতে, অনুসন্ধান ও হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার নামে দুর্নীতিবাজদের ম্যাজিক-কারিশমার শেষ নেই। দুর্নীতিবাজরা মামলা ও অভিযোগ থেকে অবমুক্তি পেতে অধিকাংশ মামলার তদন্ত চলছে ধীরগতিতে। ক্ষমতার দাপটে একেকটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন একাধিকবার। দুর্নীতিবাজরা মামলা থেকে রক্ষা পেতে নিয়েছেন মামলা পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের সহযোগিতা। দুদকের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে ঘুষ বিনিময় হয়েছে কোটি কোটি টাকা। যেকারণে মামলা ও অভিযোগ-পত্র গুলো খুব একটা এগুচ্ছেনা। শুধু চলছে অনুসন্ধান আর অনুসন্ধান। মাঝে-মধ্যে মামলার তারিখ পড়লেও তা শুনানিতে নানা গড়িমসির কারণে দুর্নীতিবাজরা আছেন বহাল তবিয়তে। তবে তাদের বিগত দিনের পাহাড় সমপরিমাণ দুর্নীতি, অনিয়ম ইতোমধ্যে সামনে এসেছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ১৬ বছর ধরে যেসব কর্মকর্তা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত এবং ওএসডি ছিলেন তাদের অনেকেই চাকরিতে বহাল হয়েছেন। ইতোমধ্যে ড্রেজিং, ইঞ্জিনিয়ারিং, বন্দর সহ বিভিন্ন দপ্তরে রদবদল, হয়েছে। তবে একজন মেম্বার সহ কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। ঘাট ইজারা, উন্নয়ন কার্যক্রম ও জনবল নিয়োগে অনিয়ম এবং বিভিন্ন প্রকল্পের টেন্ডার কারসাজি করে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই মেম্বার সিন্ডিকেট। তাছাড়া রাজনৈতিক পরিবর্তন হলেও অনেকেই ভোল্ট পালটিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। টানা দশ পনের বছর ধরে একই পদে এবং একই চেয়ারে রয়েছেন বেশ কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সূত্রমতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিআইডব্লিউটিএ'র প্রতিটি ডিভিশনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। দক্ষ, সৎ ও মেধাবীরা যথাযথ মূল্যায়ন না পাওয়ায় দুর্নীতিবাজদের ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির খতিয়ান নিয়মে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, দুদকও বিআইডব্লিউটিএ'র দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তদন্তকার্যক্রম কচ্ছপ গতিতে পরিচালনা করায় জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম নিচ্ছে।অন্যদিকে ট্যাগিং অভিযোগে বিআইডব্লিউটিএ'র বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালকদের দিন কাটছে ভয় ও আতঙ্কে। বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে ১০/১২ টি প্রকল্প।

অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লুটেরা বিভিন্ন প্রকল্পের পিডি সাথে আঁতাত করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এখনো এসব দোসররা সক্রিয় থাকায় কাজের ব্যাঘাত ঘটছে। এদিকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে বিআইডব্লিউটিএ'র নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ করার জন্য বলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তাতে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানের মুখে পড়বে বলে জানান প্রকল্প পরিচালকগণ।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.