November 21, 2025, 6:12 pm


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2025-11-21 14:26:29 BdST

ভূমিকম্পে নরসিংদীতে নিহত ২, আহত ৫৫


ছুটির দিনের সকালে শক্ত ঝাঁকুনিতে কেঁপে উঠল ঘরবাড়ি, আতঙ্ক ছড়াল ঢাকাসহ সারা দেশে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সময় স্থায়ী হওয়া এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত শিশু সহ ৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে এ ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

অ্যান্ড্রয়েড আর্থকোয়েক অ্যালার্ট সিসেট্ম বলছে, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৭। ভূমিকম্পটি কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। তবে আগের একই মাত্রার ভূমিকম্পগুলোর চেয়ে আজকের কম্পনের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল।

এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিলো রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি নরসিংদীর ঘোড়াশাল। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়।

এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল নরসিংদীতে শিশু সহ ২ জন নিহত হয়েছেন। আজকের শক্তিশালী ভূমিকম্পে এই জেলায় অন্তত ৫৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।

আরও পড়ুন: ৫.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কাঁপল ঢাকা, নিহত ৬

নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির প্রাণ গেছে বলে পলাশ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন, নিহতের নাম তাৎক্ষনিকভাবে জানা যায়নি, তার বয়স ৬৫ বছর।

নরসিংদী সদর থানার গাবতলি এলাকায় বাড়ির সানশেড ভেঙে পড়ে আহত হয় ১০ বছর বয়সী ওমর তার দুই বোন ও তার বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল। দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ওমরের মৃত্যু হয় বলে হাসপাতালের পুলিশ ক্যম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানিয়েছেন।

উজ্জ্বল গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

শুক্রবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে স্বজনরা তাদের দুজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে।

ওমরের চাচা জাকির হোসেন বলেন, “ভুমিকম্পের সময় দেলোয়ার হোসেন তার এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছিলেন। এসময় বাসার সানসেট ভেঙে তাদের উপড় পড়ে দুইজন গুরুতর আহত হয়।

"পরে স্থানীয়রা তাদেরকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাবা ও ছেলেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক ছেলে ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন।"

দেলোয়ারের আহত দুই মেয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে বলেও জানান তিনি।

তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় উত্তর পাড়া গ্রামের। বর্তমানে নরসিংদী গাবতলী এলাকায় ভাড়া থাকতেন তারা।

নরসিংদীতে একটি বাড়ির ছাদের রেলিং ভেঙে তিনজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন স্থানে আরো ৫৫ জন আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

শক্তিশালী এই কম্পনে জেলায় বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং দোকানের তাক থেকে মালামাল পড়ে গেছে। একটি ভবন থেকে ইট খসে পড়ে অন্তত দুজন আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

নরসিংদীর জেলার সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ আমিরুল হক তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আজকের ভূমিকম্পের ঘটনায় ৫৫ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। তাদের জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহতদের ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।

ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের কাছাকাছি এলাকা ঘোড়াশাল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র ঝাঁকুনিতে বিভিন্ন দোকানের সাজানো মালামাল পড়ে গেছে। বিশেষ করে মুদিদোকান ও ক্রোকারিজের দোকানগুলোতে কাঁচের জিনিসপত্র ভেঙে ক্ষতি হয়েছে।

ঘোড়াশাল বাজারের জুতার দোকানি আলম মিয়া বলেন, 'আমার দোকানে জুতাসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল ছিল। ভূমিকম্প শুরু হলে সবকিছু তাকে থেকে পড়ে যায় এবং আসবাব ভেঙে যায়। এতে আমার প্রায় ৬ লাখ টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে।'

একই বাজারের মুদিদোকানি আসলাম মিয়া জানান, কম্পনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে তিনি প্রথমে পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারেননি। তিনি বলেন, 'প্রথমে মনে হয়েছে কেউ দোকানে হামলা করেছে। পরক্ষণেই বুঝতে পারি ভূমিকম্প। এতে বেশ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।'

এদিকে কম্পনের ফলে বহুতল ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ায় মানুষের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। ঘোড়াশাল ঈদগাহ রোডের মারকাসুল সুন্নাহ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি সালা উদ্দিন আনসারী বলেন, 'আমাদের মাদ্রাসার ছয়তলা ভবনের চার–পাঁচটি জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা সবাই আতঙ্কিত।'

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে বেশ কয়েকটি ভবনে ফাটল ও ধসের খবর পাওয়া গিয়েছে যা রাজধানীতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করেছে।

অনেক উঁচু ভবনের বাসিন্দারা জানান, কম্পনের সময় পুরো ভবন জোরে দুলতে থাকে এবং জিনিসপত্র এলোমেলো হয়ে যায়। আতঙ্কে অনেকে চিৎকার করতে করতে দ্রুত রাস্তায় নেমে আসেন।

মাগুরা, চাঁদপুর, নীলফামারী, সীতাকুণ্ড, সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, বগুড়া, বরিশাল, মৌলভীবাজার থেকে এই ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ভূমিকম্পের সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই আতঙ্কে ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।

গত ৩০ বছরের মধ্যে দেশে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প এটি। হিরোসিমা, নাগাসাকিতে ফেলা একটি বোমা যে শক্তি রিলিজ করে, আজকের ভূমিকম্প সেই মাত্রার শক্তি রিলিজ করেছে। এমনটাই জানিয়েছেন, ভূমিকম্প গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবায়েত কবির।

এদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সংশ্লিষ্ট সকল দফতরকে অবিলম্বে মাঠপর্যায়ে নেমে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.