September 18, 2024, 7:10 pm


নেহাল আহমেদ

Published:
2024-09-12 16:48:10 BdST

রাজবাড়ীতে ফকির সন্নাসীদের বিক্ষোভ


আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজবাড়ী প্রেসক্লাবের সামনে ফকির সন্নাসীরা মানববন্ধন করেছেন। এসময় তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজার ভাঙ্গা এবং সন্নাসীদের আস্তানা ভাঙ্গার প্রতিবাদ করেন।

তারা বলেন আমরা কাউকে তো অসুবিধা সৃষ্টি করছিনা। আমাদের জগৎ নিয়ে আমরা বসবাস করি। আমাদের উপর অত্যাচার কেন? সমাজে যারা খারাপ প্রকৃতির দুষ্ট মানুষ আছে তাদের বিতাড়িত করেন।

মানববন্ধনের আগে তারা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে স্লোগান দেন। হঠাৎ সাধু সন্নাসীদের এই বিক্ষোভ দেখে মনে হতে পারে এ যেন অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে বাংলায় ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ।

ইতিহাস থেকে জানা যায় শাসন ক্ষমতার বাইরে থেকে যারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে প্রথম চ্যালেঞ্জ করেছিল তারা হচ্ছে ফকির ও সন্ন্যাসী।

১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার পতনের পর ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সূচনা ঘটে। এর কয়েক বছর পরেই বাংলাতে এক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে যা ব্রিটিশ সরকারকে অনেকটাই চিন্তিত করে তোলে।

কাগজে-কলমে এই বিদ্রোহকে ‘ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলন’ নামে অভিহিত করা হয়। এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন প্রায় ৫০ হাজারেরও অধিক সন্ন্যাসী, ফকির, কৃষক এবং সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। প্রায় ১৮০০ সাল পর্যন্ত চলেছিল এই আন্দোলন।

ফকির সন্ন্যাসীদের এই বিদ্রোহের মূল আহবায়ক ছিলেন মাদারিয়া তরিকার সুফিসাধক মজনু শাহ। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে মজনু শাহের খলিফা ছিলেন সুফিসাধক মুসা শাহ, চেরাগ আলী শাহ, সোবহান শাহ, করিম শাহ এবং আরো অনেকে। পরবর্তীতে এই বিদ্রোহের সাথে ভোজপুরী ব্রাহ্মণ ভবানী পাঠক, দেবী চৌধুরানীসহ আরো অনেকে জড়িত হতে থাকেন।

দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, মালদা, কোচবিহারসহ বাংলার বিভিন্ন জায়গায় এই আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এছাড়াও বিহারের পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ, নেপাল ও আসামসহ বিভিন্ন জায়গায় এই বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।

বাংলায় ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ ছিল একটি অভূতপূর্ব আন্দোলন। এরকম বিদ্রোহ সচরাচর বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না। সমাজে যারা ভিক্ষা করে খায়, যাদের কোন নির্দিষ্ট আবাসস্থল নাই; তারা কি না রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বিদ্রোহ গড়ে তুলেছিল যা ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে কোম্পানি সরকারকেও বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা