September 21, 2024, 5:50 pm


অনলাইন ডেস্ক:

Published:
2024-09-21 15:11:09 BdST

ক্যাম্পাসে মিশ্র অভিমত নিষিদ্ধ সমাধান নয়:ছাত্ররাজনীতি


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রনেতাকে হত্যার পর নতুন করে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছাত্ররাজনীতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে। ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করাকে অযৌক্তিক বলছে ছাত্র সংগঠনগুলো। তারা বলছে, রাজনীতি বন্ধ হলে ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব অবসানে শুধু ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করাই সমস্যার সমাধান নয়। দখলদারিত্ব বন্ধের নামে পুরো ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করলে বৃহৎ ছাত্রসমাজের মতপ্রকাশের অধিকার বন্ধ হয়ে যাবে।
স্বায়ত্তশাসন প্রদান, অভ্যন্তরীণ প্রশাসন ও একাডেমিক কর্মকাণ্ডে সরকারের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং ছাত্র-শিক্ষক সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষালয়কে সত্যিকার অর্থেই মুক্তবুদ্ধি চর্চার ও মুক্তচিন্তা প্রকাশের পীঠস্থান হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করতে প্রণীত হয়েছিল ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ। আর এই অধ্যাদেশের আলোকে বড় চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চলে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার অন্যতম একটি দফা ছিল ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ৬ আগস্ট খোলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এরপরই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানান। এ দাবিতে তারা বিভিন্ন সভা ও মানববন্ধনও করেন। শিক্ষার্থীরা রাজনীতি চান কি না, এমন জরিপ চালিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ। সেই জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৮৪ শতাংশ দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে দাবি জানান। এর মধ্যে গত বুধবার রাতে মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামের ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ যুবককে পিটিয়ে মারার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বাসভবনে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভা হয়। সেখানে ক্যাম্পাসে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। এরপরই এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা।
এ বিষয়ে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ সময়ের আলোকে বলেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। এতদিন তারা দেখেছে ছাত্ররাজনীতি মানে শিক্ষার্থীদের মুক্ত চিন্তা দমিয়ে রাখা। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের মাধ্যমে সেই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে সাময়িকভাবে বের হতে চাইছে। নতুন একটি বাংলাদেশে সবকিছু সুন্দরভাবে চলুক। আবার যেন সেসব ফিরে না আসে। সেই থেকে দাবি উঠেছে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের। নতুন বাংলাদেশে এখন কেউ ওইরকম করতে পারবে না। ছাত্ররাজনীতি বিষয়ে কী হওয়া উচিত এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্বচ্ছ চিন্তায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ এটি সাময়িক। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুষ্ঠুভাবে সবার জন্য ভালো সেই সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি মনে করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মো. আমানুল্লাহ সময়ের আলোকে বলেন, ব্রিটিশ খেদাও থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-র স্বৈরাচারের বিদায় এবং ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সবকিছুই তো ছাত্রদের নেতৃত্বে হয়েছে। মুক্তচিন্তার প্রসারের মাধ্যম সঙ্কুচিত করা ঠিক নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন উল্লেখ করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো গণতন্ত্রের সূতিকাগার। দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন এখান থেকেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধ করা হচ্ছে। যারা বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর তারাই এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজনীতি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস হবে এবং গোপন সংগঠনগুলোর তৎপরতা বাড়বে। তিনি বলেন, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবকে অপমান করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই অনৈতিক সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। আমরা ছাত্রদলও এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম এবং সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা খেদানোর আন্দোলন থামাতে সরকারি নির্দেশের আজ্ঞাবহ হয়ে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সিন্ডিকেট সদস্যরা শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিল, তারাই আবার ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি স্থগিতের সিদ্ধান্তের দিকে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে! বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন মনে করে, এই অপচেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্যান্টনমেন্ট বানানোর পাঁয়তারা। তারা বলেন, গত প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনে দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফোরামও আজ্ঞাবহ দলদাসে ভরে ফেলা হয়েছে। ঢাবির সিন্ডিকেট সদস্যদের বেশিরভাগই যে আওয়ামী আজ্ঞাবহ তার প্রমাণ মিলে গত ১৭ জুলাই। আন্দোলন সরকার পতনের এক দফার দিকেই যাচ্ছে, তখন ঢাবির আওয়ামী সিন্ডিকেট সরকারি আদেশে সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার, শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দেয় হল ছাড়তে। তারা আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনা, গণঅভ্যুত্থান ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে সব ছাত্র সংগঠন নিজেদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে কার্যত স্তিমিত রাখলেও আমরা দেখেছি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে লাশ পড়তে, মব ভায়োলেন্স তৈরি করে একের পর এক খুন চলতে, দেশব্যাপী মাজার-মন্দিরে আর পাহাড়ে আদিবাসীদের ওপর হামলা হতে। ফলে এ কথা বলার সুযোগই নেই যে ছাত্ররাজনীতি না থাকলে ক্যাম্পাস শান্ত থাকবে, দেশ ভালো থাকবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা