ঐতিহ্যের ঢাকা
Published:2024-10-08 12:17:19 BdST
‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মানেই এক জীবন্ত ইতিহাস, ইতিহাসের এক চলমান অধ্যায় এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। এ ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানের আনাচকানাচে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে ইতিহাস, রচিত হয়েছে ইতিহাসের নানা অধ্যায়। বটতলা, মধুর ক্যানটিন, কলাভবন, শহীদ মিনার এমন কোনো জায়গা নেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের, যেখানে বাঙালি ও বাংলাদেশের ইতিহাস তার কোনো কোনো পর্ব উন্মোচন করেনি। আর এ ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার পেছনের ইতিহাসও কম চমকপ্রদ নয়।
১৯২১ সালের জুলাই মাসে ৩টি অনুষদের অধীনে (বিজ্ঞান, কলা ও আইন) ১২টি বিভাগ ও ৮৪৭ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বীজ বপন হয়েছিল ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘটনার মধ্য দিয়ে। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব বাংলা ও আসামকে নিয়ে যে আলাদা রাজ্য গঠিত হয়েছিল, তা এ অঞ্চলের মুসলিমপ্রধান জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের আশা ও চাওয়া–পাওয়ারই বাস্তব প্রতিফলন। এটা এই অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এবং সর্বোপরি তাদের স্বাবলম্বিতা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক ছিল। কিন্তু নানা বিরোধিতার মুখে ইংরেজ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ ব্যবস্থাকে বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়, যা বঙ্গভঙ্গ রদ নামে পরিচিত।
সেই সময় কলকাতার তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত ও হিন্দু নেতারা ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা রোধে স্মারকলিপি প্রদান করেই ক্ষান্ত থাকেননি, তাঁরা প্রতিবাদ সভা থেকে শুরু করে ।
বঙ্গভঙ্গ রদের ঘটনায় পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগণ ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ ও আশাহত হন। ঢাকার তৎকালীন নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে একদল মুসলিম জনপ্রতিনিধি, যার মধ্যে ‘বাংলার বাঘ’ খ্যাত এ কে ফজলুল হক ও সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী অন্যতম, বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান সর্বপ্রথম ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি।
ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের ঢাকা পরিদর্শনকালে এই দাবি তোলা হয়। সেই সময়ে পূর্ব বাংলায় ৯টি কলেজ থাকলেও উচ্চশিক্ষার জন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। পরে এই অঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবিকে সম্মান জানিয়ে লর্ড কার্জন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদনে সম্মতি দেন এবং তার ফলে একই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় রাজ্য সরকার কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সপক্ষে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র প্রকাশিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৪ এপ্রিল বাংলার রাজ্য সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা প্রণয়নের আহ্বান জানানো হয়। এ লক্ষ্যে ২৭ মে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠিত হয় স্যার রবার্ট নাথানিয়েলের নেতৃত্বে, যা ‘নাথান কমিটি’ নামে পরিচিত। এ কমিটি দ্রুততার সঙ্গে রিপোর্ট প্রদান করে ১৯১২ সালের শেষ দিকে।
১৯১৩ সালে নাথান কমিটি রিপোর্ট জনমতের জন্য প্রকাশিত হয় এবং একই বছরের ডিসেম্বরে তা অনুমোদন লাভ করে। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প স্থগিত থাকে দীর্ঘদিন। ১৯১৭ সালের নভেম্বরে ইংরেজ সরকার ‘স্যাডলার কমিশন’ গঠন করে পূর্ববর্তী ‘নাথান কমিশনে’র রিপোর্টকে পর্যালোচনা করে ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলোকে বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নতুন করে রিপোর্ট দিতে। এই ‘স্যাডলার কমিশন’ তাদের রিপোর্ট প্রদান করে ১৯১৯ সালের মার্চে।
১৯১৭ সালে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী তৎকালীন ব্রিটিশ-ভারতের আইন সভা ওসঢ়বৎরধষ খবমরংষধঃরাব ঈড়ঁহপরষ-এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ও নিবন্ধনের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে একটি বিল উত্থাপন করেন। পরে এটি পাস হয় ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯২০’ নামে, যার অধীনে পূর্ব বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে আজ থেকে ১০০ বছর আগে ১৯২১ সালের ১ জুলাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে যে ব্যক্তিটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, তিনি আর কেউ নন, ঢাকার চতুর্থ নবাব, ব্রিটিশ রাজত্বের সময়কার উপমহাদেশের অন্যতম রাজনীতিবিদ, পূর্ব বাংলার শিক্ষা বিস্তারের অগ্রদূত স্যার খাজা সলিমুল্লাহ। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব স্যার সলিমুল্লাহ ঢাকাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি মূলত ১৯১১ সালের আগস্টেই কার্জন হলে এক রাজনৈতিক সমাবেশে উত্থাপন করেছিলেন। পরে তাঁর এই দাবি সর্বজনীন রূপ পায় ১৯১১ তে বঙ্গভঙ্গ বাতিলের পর। স্যার সলিমুল্লাহর দান করা ৬০০ একর জমিতেই ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পটভূমি
১৯১২ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ।
এর মাত্র তিন দিন আগে ভাইসরয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছিলেন ঢাকার নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শের-এ-বাংলা হিসেবে পরিচিত রাজনীতিবিদ এ কে ফজলুল হক এবং অন্যান্য কয়েকজন নেতা।
ইতিহাসবিদরা বলছেন বঙ্গভঙ্গ রদ করার 'ক্ষতিপূরণ' হিসাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে তখনকার ব্রিটিশ সরকার।
'ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী' বইতে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন লিখেছেন, ''বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। লর্ড লিটন যাকে বলেছিলেন, 'স্প্লেনডিড ইম্পেরিয়াল কমপেনসেশন'।"
তিনি আরও লেখেন, ''পূর্ববঙ্গ শিক্ষাদীক্ষা, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিল। বঙ্গভঙ্গ হওয়ার পর এ অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন হয়েছিল, বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে।"
এর পরে ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অর্থ যেভাবে এল
বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে লন্ডনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর ভারত সরকার ১৯১২ সালের ৪ঠা এপ্রিল এক চিঠির মাধ্যমে বাংলার সরকারকে বিশদ পরিকল্পনা এবং এর আর্থিক খরচ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
২৭শে মে লন্ডনের ব্যারিস্টার রবার্ট নাথানকে প্রধান করে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। নাথান কমিটি নামে পরিচিত এই কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে।
প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত অবকাঠামোর ইমারতের নকশা-সহ ৫৩ লাখ টাকা মূল ব্যয় ধরা হয়। পরবর্তীকালে গণপূর্ত বিভাগ এটিকে ৬৭ লাখ টাকায় উন্নীত করে। এছাড়া ১২ লাখ টাকা বাৎসরিক ব্যয় ধরা হয়।
এই কমিটি মত দেয়, যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার, লিডস, লিভারপুল প্রভৃতি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই এই প্রতিষ্ঠানটিও হতে হবে একক আবাসিক শিক্ষাক্ষেত্র। ঢাকার সাতটি কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত থাকবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে কমিটি।
কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকার ছোট প্রকল্প বাস্তবায়নও সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।
পরে ১৯১৭ সালে লর্ড চেমসফোর্ড কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাসমূহ খতিয়ে দেখার জন্য মাইকেল স্যাডলারকে প্রধান করে একটি কমিশন গঠন করেন।
যার নাম ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন বা স্যাডলার কমিশন। এই কমিশনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেয়।
এই কমিশন মোট ১৩টি সুপারিশ করেছিল, যার একটি ছিল এটি হবে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং আর একটি - বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল হাউজের পাঁচ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত করা।
১৯১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলে ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন।
ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে শুরু থেকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর। কিন্তু, হঠাৎ করে ১৯১৫ সালে তাঁর মৃত্যু ঘটলে ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্যোগের হাল ধরেন।
শেষ পর্যন্ত ১৯২০ সালের ১৩ই মার্চ ভারতীয় আইন সভায় 'দ্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট ১৯২০' অনুমোদিত হয়। গভর্নর জেনারেল সেই আইনে স্বাক্ষর করেন ২৩শে মার্চ।
স্যাডলার কমিশনের অন্যতম সদস্য, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক রেজিস্ট্রার স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ ১৯২০ সালের পহেলা ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ পান।
পরের বছর, ১৯২১ সালের পহেলা জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নিয়ে যে বিতর্ক
রমনা এলাকায় ঢাকার নবাব পরিবারের দান করা ৬০০ একর জমি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। নবাব সলিমুল্লাহর নামটিই এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নিয়ে এমন একটি বহুল প্রচলিত তথ্য আমরা সবাই জানি।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও রেকর্ডে এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায় না।
রমনার যে জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়াপত্তন তার পুরোটাই খাস জমি বলে বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ ও ইতিহাসের বইতে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ : ‘অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা ও অন্যান্য’ সরদার ফজলুল করিমের লেখা একটি বই।
সরদার ফজলুল করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার টাকা, জমির উৎস এবং সলিমুল্লাহ হল সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের কাছে জানতে চেয়েছিলেন।
বইটিতে বলা হয়েছে, আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “কোনও মুসলমান ধনীর কাছ থেকেই ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডাইরেক্টলি কোনও ফাইন্যান্সিয়াল কন্ট্রিবিউশন পায় নাই। সলিমুল্লাহ হল যে তৈরি হল তা পুরোই সরকারের টাকায়। নওয়াব পরিবারের টাকায় নয়; জায়গাতেও নয়। রমনায় যে জায়গায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি, তা পুরোটাই খাসমহল এবং সরকারের জমি, সেটেলমেন্ট রিপোর্টে তাই আছে।”
রমনার যে এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেখান থেকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর পর্যন্ত নবাব পরিবারের জমি ছিল বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন জানান।
তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটিশ সরকার নবাবদের কাছ থেকে জমি রিকুইজিশন করে। পরে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান আমলে সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জমি, ভবন নিয়ে নেয়। বিনিময়ে এখনকার এলাকাকে বিশ্ববিদ্যালয়কে লিজ দেয়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব জমি বা ভবন ছিল সেটার জন্য যে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ছিল তা কখনো পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়।”
মি. মামুন জানান, পরীবাগ, পূর্বের পিজি হাসপাতাল এবং বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিও নবাবদের ছিল।
এই ইতিহাসবিদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট বিভাগের কাছে কোনও দলিলপত্র না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নিয়ে জটিলতা রয়েই গেছে।
বাংলাপিডিয়াতে বলা হয়েছে, বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনার আওতায় পূর্ববাংলা ও আসাম সরকারের প্রশাসনিক দপ্তর প্রতিষ্ঠার জন্য রমনা এলাকায় অধিগ্রহণ করা ২৪৩ একর ভূমি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত হয়।
কার্জন হল, ঢাকা কলেজ, নতুন সরকারি ভবন, সচিবালয়, সরকারি ছাপাখানা, সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসস্থল ও ছোটখাটো ইমারত ওই এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পরবর্তীকালে এ সকল ইমারত, ভূমি ও স্থাপনা বার্ষিক এক হাজার টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ইজারা দেওয়া হয়।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে এই জমির মালিকানার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমদ তার ভাষণে ঢাকার নবাব খাজা সলিমুল্লাহ ৬০০ একর জমি দান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবদান রেখেছেন বলে বক্তব্য দেন।
এমন বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির।
মি. বাছির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষ্যে “শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য” নামে দুই খণ্ডের যে বই প্রকাশিত হয়েছে সেটির সহযোগী সম্পাদক।
মি. বাছির বিবিসি বাংলাকে বলেন, “শতবর্ষের বইয়ের জন্য বিভিন্ন নথি ঘাঁটাঘাটি করেছি আমরা। ঢাকার নবাব ৬০০ একর জমি দিয়েছেন এমন কোনও তথ্য সরাসরি কোথাও উল্লেখ নেই।"
"তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় জমি পেল কোথা থেকে? তখন দেখতে পাই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন সময় জমি লিজ নিয়েছে। এই লিজের বিনিময়ে যে পয়সা-কড়ি দেবার কথা সেটাও দিয়েছে।”
১৯৮১ সালে অধ্যাপক এম এ রহিম ‘হিস্ট্রি অব দ্য ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা’ নামে একটি বই লিখেছেন। এতে তৎকালীন সরকারের কাছ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমি ইজারা নিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বইটিতে লিজ নেয়ার রেকর্ডও নথিবদ্ধ করা হয়েছে।
মি. বাছির বলেন, “এটি কি মিথ নাকি রিয়েলিটি? এটা আমাদের তালাশ করতে হবে। তাই কোনও উৎস থেকে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে বলাটা ঠিক হবে না। যদি কোথাও না পাই তবে কীভাবে বলি নবাব সলিমুল্লাহ এই ৬০০ একর জমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়েছে?”
তবে এই অধ্যাপক মনে করছেন, “বিষয়টি এমন হতে পারে ব্রিটিশ সরকার যখন ১৯০৫ সালে পূর্ববঙ্গে রাজধানী করে তখন নবাবরা হয়তো সরকারকে কোনও অনুদান দিয়ে থাকতে পারেন।”
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নবাবদের কাছ থেকে সরাসরি কোন জমি পেয়েছে এমন কোন তথ্য উপাত্ত নেই বলে দাবি করেন মি. বাছির।
প্রতিষ্ঠার পরই আর্থিক সংকটে
প্রতিষ্ঠার পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম যে সমস্যার মুখোমুখি হয় তা হল অর্থনৈতিক সংকট। কারণ বাংলা সরকার আইনসভার অনুমোদন ছাড়া সরকারি খাত থেকে কোনও অর্থ ব্যয় করতে পারত না।
নাথান কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বাৎসরিক ব্যয় ১২ লাখ টাকা নির্ধারণ করলেও বাংলার তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী প্রভাস মিত্র পাঁচ লাখ টাকা কমিয়ে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য রমেশ চন্দ্র মজুমদারের লেখা ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : পূর্ব-কথা’য় বলা হয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী প্রভাস মিত্র সীমিত টাকার মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব খরচ চালাতে নির্দেশ দেন। এর ফলে শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিতে হল।
ওই বইতে রমেশ চন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, "অধ্যাপকদের বেতন ছিল এক হাজার থেকে আঠারশ টাকা। সেটি কমিয়ে করা হল এক হাজার টাকা। এভাবে সব শ্রেণির শিক্ষকের বেতন কমে গেল।"
এই খরচ কমানোর কথা বাংলাপিডিয়াতেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ভারত সরকার ক্যাপিটাল খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকার ফান্ড বাংলা সরকারের কাছে হস্তান্তর করলেও প্রভাস মিত্র ওই ফান্ড প্রাদেশিক ফান্ডের সাথে মিলিয়ে মাত্র নয় লাখ টাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেন।
তাঁর যুক্তি ছিল যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রচুর সরকারি ইমারত ও বিস্তর জায়গা-জমি বাংলা সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় যারা বিরোধিতা করেছিলেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় মূলত তিন ধরনের লোকজন বিরোধিতা করেছিলেন। ইতিহাসের আলোকে সবচেয়ে বিরোধী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নাম জানা গেছে। এ আলোচনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজন আছেন। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।
কথা সাহিত্যিক এবং প্রাবন্ধিক কুলদা রায় তার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও রবীন্দ্রনাথ’ নামক প্রবন্ধে লিখেছেন মূলত-বিরোধিতা করেছিলেন তিন ধরনের লোকজন।
এক. পশ্চিমবঙ্গের কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের কোনো লাভ নেই। পূর্ববঙ্গের মুসলমানদেরই লাভ হবে। তাদের জন্য ঢাকায় নয় পশ্চিমবঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াটাই লাভজনক।
দুই. পূর্ব বাংলার কিছু মুসলমান-তারা মনে করেছিলেন, পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে ১০০০০ জনের মধ্যে ১ জন মাত্র স্কুল পর্যায়ে পাশ করতে পারে। কলেজ পর্যায়ে তাদের ছাত্র সংখ্যা খুবই কম। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সেখানে মুসলমান ছাত্রদের সংখ্যা খুবই কম হবে। পূর্ববঙ্গে প্রাইমারি এবং হাইস্কুল হলে সেখানে পড়ানা করে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষার হার বাড়বে। আগে সেটা দরকার। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য যে সরকারি বাজেট বরাদ্দ আছে তা বিশ্ববিদ্যালয়েই ব্যয় হয়ে যাবে। নতুন করে প্রাইমারি বা হাইস্কুল হবে না। যেগুলো আছে সেগুলোও অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সেজন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় চাননি।
তিন. পশ্চিমবঙ্গের কিছু হিন্দু মনে করেছিলেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বরাদ্দ কমে যাবে। সুতরাং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় চলবে কীভাবে? এই ভয়েই তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন।
লেখক এবং গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ তার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা’ বইয়ে লিখেছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বাঙালি মুসলমানদের ক্ষোভ ছিল ১৯০৫-এ পূর্ব বাংলা এবং আসাম প্রদেশ গঠনের অনেক আগে থেকেই। ... ক্ষোভের কারণ শুধু হিন্দু প্রাধান্য নয়, শিক্ষাক্রমে হিন্দুধর্ম প্রাধান্য পাওয়ায় মুসলমানদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
সৈয়দ আবুল মকসুদের এ বইতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর নাম উঠে এসেছে। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকজনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন বলে উল্লেখ করা হয়।
ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৯১২ সালে তার ঢাকা সফর শেষে কলকাতা প্রত্যাবর্তন করলে ১৯১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ড. রাসবিহারী ঘোষের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতামূলক একটি স্মারকলিপি পেশ করেন।
এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বইতে উঠে এসেছে, লর্ড হার্ডিঞ্জ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কী মূল্যে অর্থাৎ কিসের বিনিময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিরোধিতা থেকে বিরত থাকবেন?
শেষ পর্যন্ত স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য চারটি নতুন অধ্যাপক পদ সৃষ্টির বিনিময়ে তার বিরোধিতার অবসান করেছিলেন। পরবর্তীতে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগে সহযোগিতা করেন।
যারা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা করেছিলেন, তারা স্বপক্ষে দালিলিক কোনো তথ্য প্রমাণ দেননি। সেই সময়কার সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা এবং রবীন্দ্রনাথের যাদের সঙ্গে উঠাবসা ছিল তাদের কয়েকজন ছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিপক্ষে। তাই অনেকেই লিখেছেন তিনিও এর বিপক্ষেই ছিলেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ তার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বইয়ে লিখেছেন, শ্রেণিস্বার্থে রবীন্দ্রনাথও ছিলেন কার্জনের (লর্ড কার্জন) ওপর অতি ক্ষুব্ধ। কার্জনের উচ্চশিক্ষাসংক্রান্ত মন্তব্যের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কলকাতার হিন্দু সমাজে। তাতে রবীন্দ্রনাথও অংশগ্রহণ করেন। তিনি যে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন, তাতে কিছু ছিল যুক্তি, বেশিরভাগই ছিল আবেগ এবং কিছু ছিল ক্ষোভ।
আবার যারা বলেছেন রবীন্দ্রনাথ বিরোধিতা করেননি, তারা এর স্বপক্ষে বেশ কিছু ঘটনা এবং দিন তারিখের কথা উল্লেখ করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেছেন, কেউ কেউ কোনো প্রমাণ উপস্থিত না করেই লিখিতভাবে জানাচ্ছেন যে, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ মার্চ কলকাতায় গড়ের মাঠে রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে এক বিরাট জনসভা হয়। ও রকম একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল বটে, কিন্তু তাতে রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি ছিল অসম্ভব, কেননা সেদিন তিনি কলকাতাতেই ছিলেন না।
তিনি বলেন, ১৯১২ সালের ১৯ মার্চ সিটি অব প্যারিস জাহাজযোগে রবীন্দ্রনাথের বিলেতযাত্রার কথা ছিল। তার সফরসঙ্গী ডাক্তার দ্বিজেন্দ্রনাথ মিত্র জাহাজে উঠে পড়েছিলেন, কবির মালপত্রও তাতে তোলা হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু আকস্মিকভাবে ওইদিন সকালে রবীন্দ্রনাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে মাদ্রাজ থেকে তার মালপত্র ফিরিয়ে আনা হয়। কলকাতায় কয়েক দিন বিশ্রাম করে ২৪ মার্চ রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে চলে আসেন এবং ২৮ মার্চ থেকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে সেখানে বসে ১৮টি গান ও কবিতা রচনা করেন।
আবার সেই সময়কার সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গবেষক তৌহিদুল হক বলছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে তিন শ্রেণির মানুষ বিরোধিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে আমরা রবীন্দ্রনাথকে তৃতীয় কাতারে রাখতে চাই। কারণ তারা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের উচ্চবর্ণের কিছু হিন্দু সমাজ। তাদের সঙ্গে বিশেষ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় আর রাজনীতিক সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের একাধিকবার বৈঠক, আলোচনা হয়েছে শিলাইদহ যাওয়ার আগেও। এ থেকে আমরা অনুধাবন করতে চাই সেখানে পূর্ববঙ্গের সার্বিক উন্নতি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে। তবে এরও কোনো স্পষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকায় যারা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিরোধিতা যে হয়েছিল নানা পক্ষ থেকে সেটা ইতিহাস ঘাটলে তথ্য পাওয়া যায়। তবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আবশ্যকতা রয়েছে সেটা বোঝাতে এবং প্রতিষ্ঠার ব্যাপার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন যারা তাদের কথা না বললেই নয়।
এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ। ১৯১৫ সালে নবাব সলিমুল্লাহের মৃত্যু হলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী শক্ত হাতে এই উদ্যোগের হাল ধরেন। অন্যদের মধ্যে আবুল কাশেম ফজলুল হক উল্লেখযোগ্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় পূর্ব বাংলার হিন্দুরাও এগিয়ে এসেছিলেন। এদের মধ্যে ঢাকার বালিয়াটির জমিদার অন্যতম। জগন্নাথ হলের নামকরণ হয় তার বাবা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামে।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.