September 20, 2024, 8:37 am


সামিউর রহমান

Published:
2024-08-21 04:50:39 BdST

এখনও অধরা স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিবের একান্ত সহযোগী জাকিয়াঅবশেষে স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আজিজুর ওএসডি


নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সীমাহীন দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমানকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) এই বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে নিয়মিত সচিব পদায়ন না করা পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব আকমল হোসেন অতিরিক্ত হিসেবে এই বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে যোগদানের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক-২ (অতিরিক্ত সচিব) পদে কর্মরত ছিলেন মো. আজিজুর রহমান। ২০২৩ সালের ২৩শে জানুয়ারি সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে যুগ্মসচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হন আজিজুর রহমান।

উল্লেখ্য যে, 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে' স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান এবং তার সকল অপকর্মে জড়িত লজিষ্টিক শাখার সাবেক পরিচালক (বর্তমানে বহাল তবিয়তে পরিচালক; পরিকল্পনা পদে কর্মরত) জাকিয়া আক্তারকে নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছিল। অবশেষে সরকার পরিবর্তনের পর ধারাবাহিক এসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিলো উর্ধতন কর্তৃপক্ষ।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ধেয়ে আসছে ভয়াবহ সংকট

স্বাস্থ্য শিক্ষা সচিব আজিজুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্যসূত্রময় ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে বারংবার যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এতদিন তা আমলে নেয়া হয়নি। 

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর জুড়ে দীর্ঘদিন যাবৎ দুর্নীতি, অনিয়ম ও নৈরাজ্য বিরাজ করে আসছিলো। বিশেষ করে অধিদপ্তরের মধ্যে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট তাদের আধিপত্য বিস্তার করে আসার পর লাগামহীন দুর্নীতির কারনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বেশিরভাগ সময়ে পুরো অধিদপ্তরে সেবার মান শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছিলো।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ওরাল পিল ক্রয়ের দরপত্র বাতিল অবৈধ: বিপিপিএ

জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সেবা ও সংকটের পেছনে মূলত: একটি নির্দিষ্ট শক্তিশালী সিন্ডিকেট দায়ী। এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী র.আ.ম মোক্তাদীর চৌধুরীর নিকটাত্মীয় পরিচয় দানকারী লজিষ্টিক শাখার সাবেক পরিচালক জাকিয়া আক্তার। তিনি বর্তমানে পরিচালক (পরিকল্পনা) পদে দায়িত্বরত আছেন।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সংকটের নেপথ্যে আজিজুর-জাকিয়া সিন্ডিকেট

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে যে কোন কেনাকাটা ও ঠিকাদার সিন্ডিকেটের তিনিই মূল হোতা। তবে পর্দার আড়ালে তাকে মূল পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রভাবশালী কর্মকর্তা স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আজিজুর রহমান। তিনিই মূলত জাকিয়া আক্তারকে দিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন নিয়োগ, বদলী, পদায়ন ও কেনা-কাটায় নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করেন।

কোন প্রকার দ্বিধা বা সংকোচন নয়; প্রকাশ্যে পছন্দের ঠিকাদার পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে যেকোনো কেনাকাটার টেন্ডারে সর্বনিম্ন দরদাতা না হওয়ার কারনে প্রায়শই পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়াই বাতিল করে দিতেন বহুল সমালোচিত দরপত্র উন্মুক্ত কমিটির সভাপতি ও তৎকালীন পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) জাকিয়া আক্তার। জাকিয়া আক্তার বর্তমানে পরিচালক (পরিকল্পনা) পদে কর্মরত আছেন।

আজিজুর-জাকিয়া সিন্ডিকেটের দুর্নীতি-অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে সম্প্রতি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কাওরান বাজারে লাগানো ব্যানার-পোস্টারও এই প্রতিবেদকের চোখে পড়েছে।

উল্লেখ্য যে, জাকিয়া আক্তার দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুরে-ফিরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লজিষ্টিক ইউনিটে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

লজিষ্টিক ইউনিটের প্রধান কাজ হল অধিদপ্তরের যে কোনো কেনা-কাটা সম্পন্ন করা। টেন্ডার, কেনা-কাটাকে ঘিরে একটি নিদিষ্ট টেন্ডার সিন্ডিকেট বলয় রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের কারনেই পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে উপকরন ঘাটতির তীব্র সংকট চলছে। এই সিন্ডিকেট বলয় ভাঁঙতে না পারলে অধিদপ্তরের সংকট আরো ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদাসীনতা, কেনাকাটায় স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং পরিকল্পনার অভাবে এই ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। ঘাটতি এতই বেশি যে, গত ১৫ বছরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এমন সংকটে পড়েনি।

সারা দেশে কনডম, মুখে খাওয়ার বড়ি ও কিটের যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা কেন হয়েছে এবং এই রহস্য উদঘাটন করা এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবী।

এই প্রসঙ্গেঁ লজিষ্টিক ইউনিটের পরিচালক মতিউর রহমান 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'কে বলেন, সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার গনঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে এই সংকট মোকাবেলা করার জন্য। আগামী দু-এক মাসের মধ্যে এ সংকট কেটে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

কেন এই সিন্ডিকেট

স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে মূলত দুটি কারনে সিন্ডিকেট হয়।

(১) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলী ও পদোন্নাতি এবং সুবিধাজনক স্থানে পদায়ন ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে।

(২) প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার কেনাকাটা ও টেন্ডারের কমিশন বানিজ্য

এই সিন্ডিকেট গুড়িয়ে দিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে ক্ষমতাধর কর্মকর্তা যেই হোক না কেন তাকে সরিয়ে যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিকে পদায়ন করতে এখনই দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে বর্তমান অরাজনৈতিক সরকারকেই।

সম্প্রতি ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর জনপ্রশাসন ও পুলিশে নানা ধরনের পরিবর্তন হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই জনপ্রশাসনে বড় পরিবর্তনে হাত দেয়।

১৪ আগস্ট এক দিনেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ ১১ জন সচিবের চুক্তি বাতিল করা হয়। আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে।

অন্যদিকে পাঁচজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিবকে চুক্তি ভিত্তিতে পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব করা হয়েছে। এছাড়া পদ-পদায়ন থেকে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে বড় পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, পুলিশ ও জনপ্রশাসনে শিগগিরই আরও কিছু পরিবর্তন করা হবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা