October 16, 2025, 9:31 pm


শাহীন আবদুল বারী

Published:
2025-10-16 18:54:26 BdST

টাঙ্গাইলে অপরাধ দমনে সফল পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে মামলার তদন্ত কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাছাড়া পুলিশের বিভিন্ন থানা ও ইউনিটিতে জনবল কম থাকায় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অধিক পরিমাণে ডিউটি করতে হচ্ছে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর পুলিশ জনগণের কাঙ্খিত সেবা দেয়ার জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশের অপারেশনাল কার্যক্রম আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে টাঙ্গাইলের ১২টি থানায় কর্মরত অফিসার ইনচার্জ সহ সকল পুলিশ সদস্য, পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে এবং জনগণের কাছে ইতিবাচক প্রশংসা কুড়াতে নিরলসভাবে দিনরাত সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। মাদক বিরোধী অভিযান এবং অপরাধীদের গ্রেফতার করতে আলাদা আলাদা টিমও গঠন করা হয়েছে। আন্তজেলা ডাকাতদের গ্রেফতার করে জেল-হাজতে পাঠানো হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সুপার ( এসপি) মোঃ মিজানুর রহমান তার অধিনস্থ অফিসার এবং ফোর্সদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলবাসীর কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ফিরিয়ে এনেছেন টাঙ্গাইলের ১২টি থানা সহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগে শৃঙ্খলা। এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান তাঁর কাজের পরিধি ও অভিমত ব্যক্ত করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, আমার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভুক্তভোগীরা এখন থানায় গিয়ে আগের মতো হয়রানির শিকার হচ্ছেন না। কাঙ্খিত সেবা পেতে পুলিশকে টাকাও দিতে হচ্ছেনা।

অপরাধ কিংবা অনৈতিক কাজের দায়ে কোন পুলিশ অফিসার বা কোন সদস্য অদ্যাবধি বরখাস্ত বা ক্লোজ করার অভিযোগ নেই বলেও জানান এসপি মিজানুর রহমান।

স্বতঃস্ফূর্তভাবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কয়েকজন নেতাকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করতেও পিছপা হননি সাহসী এই পুলিশ কর্মকর্তা। সামনে আরো শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের ঘাটি টাঙ্গাইলে ছাত্র-জনতা হত্যা মামলার আসামি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতাদেরকে গ্রেফতার করে চালান দিয়েছেন নির্দ্বিধায়। মাদকের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছেন জিরো টলারেন্স। ডাকাত নিধনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সার্থক হয়েছেন। এছাড়া আবাসিক হোটেল, সুপার হোস্টেল ও আবাসিক মেস গুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধেও তিনি সোচ্চার রয়েছেন। অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও সন্ত্রাস নির্মূল করতে তিনি ডিবি পুলিশকে কাজে লাগাচ্ছেন। সড়কে রাতের বেলায় যাতে ডাকাতি না হতে পারে সেজন্য হাইওয়ে পুলিশকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। তাছাড়া থানার ওসিদেরকে নিজ নিজ থানায় সন্ত্রাস নির্মূল করতে এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করার নির্দেশ প্রদান করেছেন এই সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা।

এসপি মিজানুর রহমান প্রতিটি কাজের আগে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। তার অধিনায়কত্ব মেনে ১২টি থানার সকল পুলিশ সদস্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে একযোগে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলবাসীর হৃদয়ের স্পন্দনে ঠাঁই করে নিয়েছেন কর্মদক্ষ এই পুলিশ সুপার।

মিজানুর রহমান বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় পুলিশ বাহিনীকে। প্রতিটি মুহুর্ত আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করে আসছি। আইজিপি মহোদয়ের চৌকস নেতৃত্ব ও বিচক্ষণতা, ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির সঠিক দিকনির্দেশনায় প্রতিটি থানার অফিসার ও পুলিশ সদস্য ধৈর্যের সাথে ও নিরলস পরিশ্রমে টাঙ্গাইলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বিশেষ করে আন্তজেলা ডাকাত নিয়ন্ত্রণ ও গ্রেফতারে আইজিপি সহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ প্রশংসিত হয়েছে।

প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে এসপি মিজান বলেন, দুধর্ষ আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের কবল থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনাসেতু মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঘাম ঝড়াতে হয়েছে পুলিশকে। অক্লান্ত পরিশ্রম, উন্নত প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ও মেধাবী পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে ব্যপক পরিকল্পনা গ্রহনের মাধ্যমেই এই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করেন পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান।

ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২৫ সালের ৪ জানুয়ারী মিজানুর রহমান টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন। প্রায় ভঙ্গুর পুলিশ বাহিনীর মনোবল ফিরিয়ে আনতেই হিমশিম খেতে হয়। এরমধ্যে মহাসড়কে সংগঠিত হয় একের পর এক ডাকাতির ঘটনা। ফলে পুলিশের ভাবমুর্তি রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কিছুকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ধৈর্য্য ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেন পুলিশ সুপার।

গত জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাঞ্চল্যকর অন্তত ১২টি ডাকাতির মামলা রেকর্ড করা হয় টাঙ্গাইলের বিভিন্ন থানায়। এসব মামলায় আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের সদস্যসহ ১১২ জন ডাকাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের মধ্যে ২৯ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দেয়। এই সফলতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের।

আলোচিত ডাকাতির ঘটনার মধ্যে- ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনাসেতু মহাসড়কের মির্জাপুরে চলন্তবাসে ডাকাতি ও বাসের নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানি ঘটনার সাথে জড়িত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানন্দি প্রদান করে। মধুপুরে বিএনপি নেতার বাড়িতে দুধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের নয় সদস্য, মহাসড়কের মির্জাপুরে ট্রাকভর্তি ৭৫ ড্রাম তেল গাড়ি সহ ডাকাতির ঘটনায় মুল আসামী তিনজন কে গ্রেফতার করে পুলিশ। মির্জাপুরের বাঁশতৈল এলাকায় রোজার ঈদের আগে গরু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৭৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় অস্ত্রসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। একই সাথে নগদ প্রায় তিন লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় মহাসড়কে সদর উপজেলায় যাত্রীবেশি ডাকাতরা বাসের যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে নেয়। এই ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে। আর মির্জাপুরে গরু ভর্তি ট্রাকে ডাকাতির ঘটনায় ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে চার ডাকাততে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এভাবে মহাসড়কে দীর্ঘদিনের গড়ে উঠা আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র তছনছ করে দেয়া হয়। পুলিশ সুপার জানান, এই মহাসড়কটি আর ডাকাতদের জন্য নিরাপদ নয়।

ঢাকা বিভাগের রেঞ্জ ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, আমি ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশ কায়েমের লক্ষ্যে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। কোন ফ্যাসিস্ট যেন আর বাংলাদেশে জাগ্রত হতে না পারে সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আমি আমার সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। সরকারের নির্দেশ মোতাবেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

তিনি বলেন, দেশের ভেতর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা পুলিশের প্রধান কাজ। প্রতিটি জেলার পুলিশ সুপার অত্যন্ত মেধা ও দৃঢ়তার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.