November 26, 2025, 5:02 am


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2025-11-25 23:32:12 BdST

বস্তিবাসীর আহাজারি; ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা৫ ঘন্টা পর কড়াইল বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণ


রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুন ৫ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে পুরোপুরি নিভতে আরও সময় লাগবে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সা‌র্ভিস সদর দফতরের মি‌ডিয়া সে‌লের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার।

এর আগে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার কথা জানানো হয়।

পরে, রাত দশটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানিয়েছেন, আগুনের শিখার তীব্রতা কমেছে এবং বেশ কয়েকটি অংশে আগুন সীমিত করা সম্ভব হয়েছে।

আরও পড়ুন: কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২১ ইউনিট

তিনি বলেন, শুরুতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে রওনা করা ইউনিটগু‌লো পৌঁছাতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট লাগে। সরু রাস্তা, যানজট ও মানুষের ভিড়ের কারণে বড় গাড়িগুলো আগুনের কাছে পৌঁছাতে সময় নেয়। এছাড়া ঘটনাস্থলে প্রচুর মানুষের ভিড়ের মধ্যে কিছু উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণেও আগুন নেভানোর কাজে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পাইপ কেটে ফেলা, জোড়া খুলে দেওয়া এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির মতো ঘটনাও ঘটেছে ব‌লে জানান ফায়ার সা‌র্ভিসের এই কর্মকর্তা।

তি‌নি বলেন, পানির ঘাটতি নেই, কিন্তু আগুনের কেন্দ্রে পানি পৌঁছাতে সময় লাগছে। এলাকা বড় হওয়ায় পাইপ জোড়া দিতে হয়েছে বহু জায়গায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কড়াইল ঝিলে পাম্প ব‌সি‌য়ে পাইপ দি‌য়ে পা‌নি ছেটা‌চ্ছেন ফায়ার ফাইটাররা। পানি সরবারহ করছে ওয়াসার গাড়িও।

ঘটনাস্থলের আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, তারপরও মানুষের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

এদিকে, আগুনে ঘরপোড়া মানুষের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে ঘটনাস্থলের পরিবেশ। আগু‌নের তীব্রতার কার‌ণে নিজেদের আশ্রয়স্থলের যেতে না পেরে দূরে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছেন নিঃস্ব বস্তিবাসী। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন খোলা মাঠে।

বস্তির বাসিন্দারা এসময় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা আগুন নেভাতে হেলিকপ্টারের দাবি করলেও তা পাঠানো হয়নি। গরিব হওয়ায় তাদের প্রতি এই অবহেলা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

বাসিন্দারা আরও বলেন, আন্দোলনের সময় হেলিকপ্টার পাওয়া গেলেও এখন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সেটাই তাদের বড় প্রশ্ন।

বস্তিবাসীর আহাজারীতে আশেপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে। এখনো কোনো হতাহতের খবর না এলেও আগুনে পোড়া অংশের প্রায় সবাই 'সবকিছু' পুড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

বস্তির বাসিন্দা সুমন আহম্মেদ বলেন, "আগুনের সময় বাসার বাইরে ছিলাম। আগুনের খবর শুইনা দৌড়াইয়া আইসা দেখি সব শেষ।"

স্ত্রী ও দুই সন্তান নিরাপদে বাসা থেকে বের হতে পারলেও কিছুই সঙ্গে নিয়ে বের হতে পারেননি বলে জানান তিনি।

ফজলু নামে আরেকজন বলেন, আগুনে ৫ শতাধিক ঘর পুড়ে গেছে। আগুন লাগা অংশে ‘কিছুই অবশিষ্ট নেই’।

সালেহা বেগমের কান্না যেন থামছিলই না। বার বার বলছিলেন, "আমি কেমনে বাঁচমু, আমার সব শেষ হইয়া গেল।"

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান ও বনানী লাগোয়া প্রায় ৯০ একর জায়গার ওপর ১০ হাজার ঘর রয়েছে এই বস্তিতে। যেখানে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডে ঘটে।

চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে আগুন লাগে এই বস্তিতে। সে সময় ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ৬১টি ঘর পুড়ে যায়। এর আগে গত বছরের ২৪ মার্চ ও ১৮ ডিসেম্বরেও দুই দফা আগুনে পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় কড়াইল বস্তির।

প্রতিবারই অগ্নিনির্বাপক বাহিনী জানিয়েছে, বস্তিতে ঢোকার রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকতে বেগ পেতে হয়। টিন, বাঁশ, কাঠের ঘরগুলো গায়ে গা লাগিয়ে ওঠানো হয়েছে; যার কারণে এখানে আগুন লাগলে দ্রুত ছড়ায়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.