May 3, 2024, 5:56 am


অনুসন্ধানী প্রতিবেদন:

Published:
2024-03-03 13:56:24 BdST

রাজউক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহনের অভিযোগমালিবাগে রাজউকের অনুমোদন ৮তলা ভবন নির্মিত হয়েছে ১০তলা


রাজধানীতে যখনই কোন ভবনে বড় ধরনের দুর্ঘটনা অথবা অগ্নিকান্ডের মত অঘটন ঘটে থাকে তখনই দেখা যায় ভবন নির্মানের ত্রুটি ছিল। বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক প্রাণহানি ঘটার পর ও দেখা গেল দেশের শীর্ষস্থানীয় ও বেসরকারী আবাসন নির্মাণকারী কোম্পানী আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের ভবন নির্মানে ত্রুটি ছিল।

কিন্তু ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এক নকশার অনুমোদন ও নির্মানের প্রতিটি পর্যায়ে রাজউকের সংশ্লিষ্ট জোনের ইমারত কর্মকর্তা ও অথরাইজড অফিসারদের তদারকি করার কথা। নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়িকভাবে অতিরিক্ত অর্থ মুনাফার জন্য নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে থাকে। যা দেখার দায়-দায়িত্ব রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

সেই হিসেবে ত্রুটিপূর্ণ ও নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম দায়-দায়িত্ব পড়ে রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মর্তাদের উপর। এরপর উক্ত ভবনের ব্যবসা/বাণিজ্য ও বসবাস করতে হলেও অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী হতে হবে। তা দেখার দায়িত্বও রাজউকের। রাজউক কোন ভাবেই বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডের এই হত্যাকাণ্ডের দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

ঢাকা শহর জুড়ে লাখ লাখ ত্রুটিপূর্ণ ও নকশা বহির্ভূত ভবন রাজউকের কর্মকর্তাদের চোখের সামনে দিয়ে গড়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে রাজউক কর্মকর্তারা নিজেদের পকেট ভারী করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে এ সমস্ত ভবন নির্মানে সহয়াতা প্রদান করেছে এই অভিযোগ ভবন নির্মানকারী ব্যক্তিদের।

রাজধানী জুড়ে লাখ লাখ নকশা বহির্ভূত ভবন নির্মানের নেপথ্যে ও রাজউক কর্মকর্তাদের হাত রয়েছে। নকশার ব্যত্যয় না ঘটলে তো তাদের পকেট ভারী হয় না। একদিনে রাতারাতি কোন ভবন গড়ে উঠে না। রাজউকের কর্মকর্তাদের সাথে অবৈধ লেনদেন না করে কেউ ত্রুটি পূর্ণ ভবন নির্মাণ করতে পারে না।

কেস স্টাডি-১
মালিবাগে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠছে ৮ তলা অনুমোদন নিয়ে ১০তলা ভবন।
মোহাম্মদ নাজমুল হক ভূঁইয়া। তিনি একজন সরকারের সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। রাজধানী ১৪০/১, মালিবাগ বাজার রোড ২য় গলি, মৌজা শহর খিলগাঁও, থানা:- শাহজাহানপুর, ঢাকা।

উক্ত জমিতে রাজউকের স্মারক নং- ২৫.৩৯.০০০০.১১৬.৩৩.১০৮৯/২১, তারিখ :- ১০/০২/২০২২ইং এর মাধ্যমে একটি (০৮) আট তলা আবাসিক (এ-২) এ একটি ইমারতের নকশা অনুমোদন পায়।

উক্ত জমিতে নাজমুল হক ভূইয়া গং আট তলার অতিরিক্ত আরও ২টি তলা অর্থাৎ ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেন। যা এখনো নির্মাণাধীন।

৮ তলা ভবন নির্মানের অনুমোদন অথচ নির্মিত হলো ১০ তলা। রাজউকের অনুমোদনকারী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাকের ডগার উপর দিয়ে কিভাবে অতিরিক্ত ২টি তলা ও নকশা বহির্ভূত সামনে, ডানে, বামে ও পেছনে বর্ধিত অংশ কাজ সম্পন্ন করলো এ প্রশ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের? বিশ্বস্থ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে যে রাজউকের জোন ৬/১ এ অথরাইজড অফিসার প্রকৌশলী জোটন দেবনাথ। উক্ত ভবনটি জোটন দেবনাথ এর আওতাধীন। একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে যে জোটন দেবনাথ এর পরামর্শ ক্রমেই অবৈধ অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে ভবন মালিক অবৈধ ২টি তলা নির্মাণ করেছে। জোটন দেবনাথ রাজউকের অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন অথরাইজড অফিসার। তার নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তিনি তার দায়িত্বরত এরিয়া ছাড়াও পুরো রাজধানী জুড়ে অবৈধ ভবন নির্মানে আবাসন কোম্পানি ও ভবন মালিকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে এ অভিযোগ একাধিক ভুক্তভোগীর। ইতোমধ্যে রাজউক উক্ত ভবনের অবৈধ অংশ ভেঁঙ্গে ফেলার জন্য পরপর ২টি নোটিশ প্রদান করেছে।


যার স্মারক নং- ২৫.৩৯.০০০০.১২২.৩২ তারিখ ৩১.৭/২০২৩ স্মারক নং- ২৫.৩৯.০০০০.১২২.৩২.২০৮/২৩/৯৬৮ ১৬/৮/২৩ উক্ত নোটিশে অবৈধ অংশ ভেঙ্গে ফেলার কথা থাকলেও অতিরিক্ত ২টি তলা অবৈধ অংশ ভাঙ্গার কথা উল্লেখ করেনি । এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে । এলাকাবাসির চাপের মুখে দায়সাড়া ভাবে নোটিশ জারি করা হয়েছে। উক্ত এলাকার ইমারত কর্মকর্তা জোবায়ের তারেক।এলাকাবাসীর মুখে মুখে একটি কথা ব্যপকভাবে প্রচারিত ভবন মালিকের নিকট থেকে ৩০লাখ টাকার বিনিময় অবৈধভাবে এ সুবিধা প্রদান করেছে রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।ইমারত কর্মকর্তার মাধ্যমেই এই অবৈধ অর্থ লেনদেন করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জনসাধারণের একটাই প্রশ্ন ১দিনে তো আর ২টি তলা নির্মাণ করা হয়নি। অবৈধ লাখ লাখ টাকার সুবিধা নিয়ে রাজউক অবৈধ ভাবে বিল্ডিং এ অতিরিক্ত ২টি তলা করার সুযোগ করে দিয়ে এখন কেন আবার ভাঙ্গার নোটিশ প্রদান করে। এখানেই শেষ নয় রাজউকের নোটিসে শুধু ডানে-বামে, সামনে-পেছনে বিচ্যুতি হিসেবে সামনে পশ্চিমে ৪.৩০ মি: পূর্বে ১.০২মি: উত্তরে ৫৯ মিটার ও দক্ষিনে ৪৫ মিটার অপসারনের নোটিশ প্রদান করেছে। কিন্তু উপরের অবৈধ ২টি তলার বিষয় কিছুই বলে নাই।

জোটন দেবনাথ এর পরামর্শক্রমে নাজমুল হক ভূঁইয়া গং রাজউকের চিঠির বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টের রিট দাখিল করে আদালতের এ স্থিতিবস্থা নিয়ে আসে। অর্থাৎ রাজউকের সিদ্ধান্তকে আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য দীর্ঘসূত্রিতার উদ্ভব সৃষ্টি করেছে।
মালিবাগের বাজার রোডে উক্ত ভবন যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে সেখানকার রাস্তা অত্যন্ত সরু প্রকৃতির । উক্ত সরু রাস্তায় কোন ভাবেই ১০ তলার ইমারত নির্মানের অনুমোদন পাওয়ার কথা নয় কারন কোন প্রকার অগ্নিকাণ্ড কিংবা দুর্ঘটনা ঘটলে হবে বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডের চেয়ে ভয়াবহ।

 

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা