বিশেষ প্রতিনিধি
Published:2021-06-24 23:27:48 BdST
লার্নিং এন্ড আনিং প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে সীমাহীন অভিযোগ
লার্নিং এন্ড আনিং প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে সীমাহীন অভিযোগ
ডাক তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীন লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের পরিচালক মোঃ আক্তার মামুনের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়,তার কারণে কালিমালিপ্ত হতে চলেছে সরকারের জিডিটাল বাংলাদেশ গড়ার মহৎ প্রয়াস। প্রকল্পে কাজ বরাদ্ধে সরকারি নীতি ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দূর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট নথি নং ই.এন ৩৭৩। যার স্মারক নং ০০.০১.০০০০.৫০৩.৩২২.২০ তারিখ ২৮/০২/২০২১। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের সহকারি পরিচালক জয়নাল আবেদীনকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। জয়নাল আবেদীন এর নেতৃত্বে গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিম ১০/০২/২০২০ তারিখে অভিযান পরিচালনা পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করে। দাখিলকৃত সে প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায় বলে উল্ল্যেখ করে বিস্তারিত তদন্তের সুপারিশ করে। দুদকের সহকারি পরিচালক জয়নাল আবেদীন ও উপসহকারি পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয় , তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অধীনে লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভলপমেন্ট প্রকল্প((২য় সংশোধিত) এর প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালিত হয়। এখানে দেখা যায় প্রকল্প পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় লার্নিং এন্ড আর্নিং প্রকল্পের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানের সাথে নেগোসিয়েশন অসমপন্ন। প্রতিবেদনে বলা হয় প্রকল্পের ৯ নং লটে বান্দরবান, চট্ট্রগ্রাম, রাঙামাটি, কক্সবাজার ও খাগড়া ছড়ি জেলার মোট ৪৮টি উপজেলায় ১১০টি ব্যাচে ২২০০ জন প্রশিক্ষণার্থিকে ফ্রিল্যাঞ্চিং এর উপর প্রশিক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানকারি নির্বাচনে প্রকল্প পরিচালক বিধি ভঙ্গ করেছেন।
কাজ পেতে অংশ গ্রহণকারি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি সর্বোচ্চ স্কোর প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিতে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নেয়া হয়। তথ্যমতে, কাজে অংশ গ্রহণকারি Sheer Vintage Solution and Kilobite IT ltd এর কারিগরি স্কোর ছিলো ৮০ এর মধ্যে ৭৪.৪০ আর্থিক স্কোর ছিলো ২০ এর মধ্যে ১৩.৮৮ আর B2M Tecnologies Ltd এর কারিগরি স্কোর ছিলো ৮০ এর মধ্যে ৫৯.২০ আর আর্থিক ছিলো ২০ এর মধ্যে ২০। এ কাজের জন্য বরাদ্ধকৃত অর্থের পরিমান হচ্ছে ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এখানে সির ভ্যানটেজ তাদের কাজের জন্য ব্যয় প্রদর্শন করে ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। একই কাজের জন্য বি২এম ৪কোটি ৮৯ লাখ টাকা দাখিল করে। কাজের সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে বি২এমকে কাজ দেয়া হয়। এখানে কারিগরি দক্ষতায় অনেক বেশী এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠান সির ভিনটেজের সাথে কোন প্রকার নেগোসিয়েশনে যায়নি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পিপিআর ১২২ বিধি মোতাবেক নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে ডিপিপি প্রকল্লিত ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে পারতো। কিন্তু তা করা হয়নি। পিপিআর ১২২ রাখা হয়েছে এই নেগোসিয়েশনের জন্যই। নেগোসিয়েশন হতে হবে ১ম ও সর্বশেষ দর দাতার সাথে। কিন্তু এখানে তা করা হয়নি। কাজটি কারিগরি দক্ষতা বিষয়ক। সে ক্ষেত্রে সির ভিনটেজ এর কারিগরি দক্ষতাকে মূল্যায়নে নেয়া জরুরী ছিলো। প্রকল্প পরিচালক ইচ্ছে করেই তা করেননি। দুদকের ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সির ভিনটেজ এর কাছ থেকে যে সার্ভিস পাওয়ার সুযোগ ছিলো বি২এম এর কাছ থেকে তা পাওয়ার সুযোগ নেই। এ সকল বিষয়ে আরো অধিক তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে মত দেয়া হয় ঐ প্রতিবেদনে। ২০ .২০.২০২০ তারিখে এ সুপারিশ করা হলেও এর পর থেকে রহস্যজনক ভাবে থেমে যায় দুদকের বিস্তারিত তদন্তের কাজ। এ ব্যাপারে যোগযোগ করা হলে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল আমীন কোন মন্তব্য করতে চাননি।একই বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রকল্প পরিচালক আক্তার মামুনের ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। একই বিষয়ে তাকে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন সাড়া দেননি।
এদিকে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বি২এম প্রশিক্ষণার্থিদের সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে না পারায় প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর থেকে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বি২এমএর লোকজন্। প্রকল্প পরিচালককে দেয়া তাদের অনৈতকি সুবিধাসমুহের আলোচনাও এ সময় চলে আসে সামনে। সূত্র মতে ৪কোটি ৭৯ লাখ টাকার কাজ হলেও শুরুতেই ৩৫ লাখ টাকা কমে কাজ হচ্ছে এমন একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করান প্রকল্প পরিচালক। এর পর প্রতি বিল থেকে ১০ শতাংশ অর্থ তাকে দেয়ার শর্তে কাজ পায় বি২এম। এর বাইরে প্রকল্প পরিচালকের মনরঞ্জনে দেশ বিদেশে সফরের খরচও বহন করেছে বি২এম। সব মিলে প্রশিক্ষণে খরচ করার চেয়ে প্রকল্প পরিচালকের পেছনেই গেছে প্রাপ্ত ফান্ডের বড় একটি অংশ। এতে সরকারের উদ্দেশ্যই শুধু ব্যহত হয়নি। সঠিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বি২এম এর এক কর্মকতা বলেন, দুদক তদন্ত করছে। এটা শুনেছি। এর বাইরে কোন কথা বলতে চান না এ প্রতিষ্ঠানের কেউই। একই বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তথ্য যোগযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এম. এম. জিয়াউল আলমের মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.